Saturday, March 25, 2017

আমরা অনেকেই ভাবি, “কোনো সমস্যা বা খারাপ কিছু হলে আমরা এমনিতেই হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়বো, এটাই স্বাভাবিক” কিন্তু আসলে কি তাই?
হতাশাকে এক ধরনের মানসিক রোগ হিসেবে ধরতে পারেন যা ক্রমেই বাড়তে থাকে এবং সময়মতো এর চিকিৎসাও করা যায়। চলুন হতাশা দূর করার কিছু ঘরোয়া উপায় সম্বন্ধে জানি-
হতাশা দূর করার উপায়
১। খাবার গ্রহণ
হতাশা কমিয়ে আনার কোনো আদর্শ ডায়েট নেই। তবে এ সময় যা যা খেতে ভালো লাগে সেগুলো খেতে হবে। হতাশার কারণে খেতে ইচ্ছা নাও করতে পারে। তাই আপনার সবচেয়ে প্রিয় খাবারটি খাওয়ার চেষ্টা করুন। খাবারটি স্বাস্থ্যকর হলে আরও ভালো।
২। ব্যায়াম করা
ব্যায়াম করার সময় আমাদের শরীরে এন্ডরফিন নামক এক ধরনের হরমোন নিঃসৃত হয় যা আমাদের হতাশা দূর করতে সাহায্য করে।
৩। পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমান
হতাশার মধ্যে থাকলে অনেকেই ঠিক মতো ঘুমাতে পারেন না। কিন্তু পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমাতে পারলে আমাদের শরীর স্বাভাবিক নিয়মে কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারে যা আমাদের হতাশা দূর করতে সাহায্য করে।
৪। লক্ষ্য নির্ধারণ করুন
সাধারণত আমরা হতাশ হয়ে যাই তখনি যখন আমাদের কোনো লক্ষ্য পূরণ হয় না। তাই বলে সেটা নিয়ে বসে থাকবেন না। নতুন লক্ষ্য নির্ধারণ করে সেটা পূরণ করার চেষ্টা করুন। সেটা পূরণ না হলে আরও একটা লক্ষ্য নির্ধারণ করুন। হাল ছাড়বেন না।
৫। গ্রিন টি পান করুন
গ্রিন টি, ক্যামোমেইল টি ইত্যাদি ঔষধি চা আমাদের মেজাজ ভালো রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া এরকম আরও অনেক খাবার খেতে পারেন যা আপনাকে হতাশা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করবে।
৬। মেডিটেশন
যদিও এটি বাংলাদেশে তেমন একটা প্রচলিত নয় তবুও মেডিটেশনের মাধ্যমে অনেক বড় বড় মানসিক সমস্যা দূর করা সম্ভব। চেষ্টা করে দেখুন। আশা করি উপকৃত হবেন।
মাঝরাতে ঘুম ভেঙে যাওয়ার বেশীরভাগ কারণ খারাপ স্বপ্ন দেখা। অথবা রাত্রে ঝুম বৃষ্টি শুরু হলে ঘুমের মাঝে পড়ে ছেদ। কিন্তু আপনি হয়তো খেয়াল করছেন কোনো কারণ ছাড়াই মাঝরাতে আপনার ঘুম ভেঙে যাচ্ছে, এমনটা হলে নিজের শরীর ও স্বাস্থ্যের দিকে একটু মনোযোগ দিন আর দেখুন এসব কারণ দায়ী কিনা। কারণ রাত্রে নিরবচ্ছিন্ন ঘুম হওয়াটা সব বয়সের মানুষের জন্যই জরুরী।
শিশু বা তরুণ বয়সে টানা ৮ ঘণ্টা ঘুমাই আমরা। কিন্তু প্রাপ্তবয়স্ক হবার পর রাত্রে এক-দুইবার ঘুম ভাঙ্গে আমাদের এবং আমরা অনেক ক্ষেত্রেই সাথে সাথে আবার ঘুমিয়ে পড়ি, সকালে আর মনেও থাকে না যা ঘুম ভেঙ্গেছিলো। কিন্তু আপনার ঘুম ভাঙার পর যদি আর ঘুমিয়ে পড়তে না পারেন, তাহলে তা সমস্যা বটে। দেখে নিন কী কী কারণে ঘুমের এমন সমস্যা হতে পারে।
১. উষ্ণ ঘর 
রুম টেম্পারেচারের সাথে ঘুমের মানের বড় সম্পর্ক আছে। ঘুম হবার জন্য ঘরের তাপমাত্রা কম হওয়া জরুরী। বেশি গরম ঘরে ঘুম আসতে দেরি হবে এবং ভালো ঘুম হবার সম্ভাবনা কম। ঘুম ভেঙ্গে যাবার সম্ভাবনাও বেশি। একেক মানুষের জন্য একেক টেম্পারেচার উপকারী তাই আপনি নিজেই এক্সপেরিমেন্ট করে দেখতে পারেন। তবে নিজের শরীরের চাইতে একটু কম তাপমাত্রাই ঘুমের জন্য ভালো।
 
২. শক্ত বিছানা 
আমরা অনেকেই ভাবি শক্ত বিছানা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। কিন্তু খুব বেশি শক্ত বিছানা আবার ঘুমের জন্য ভালো নয়। এগুলো আমাদের কোমর এবং কাঁধে চাপের সৃষ্টি করে এবং পিঠের নিচের দিকে ব্যথা তৈরি করতে পারে। ফলে আপনার শান্তির ঘুম হয় না। আপনার শরীরের জন্য আরামদায়ক, এমন একটি ম্যাট্রেস বেছে নিন।
৩. রেস্টলেস লেগ সিনড্রোম 
এটা মূলত প্রতি দশজন আমেরিকানের মাঝে একজনের হয় থাকে। তবে আপনিও হয়তো এই অভিজ্ঞতা পেয়েছেন। অনেক সময়ে ঘুমের মাঝে পা নাড়ানোর ঝোঁক হতে পারে। পা নিজের অজান্তেই নাড়ানোর কারণে ঘুম ভেঙ্গে যেতে পারে। আপনি যদি অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ গ্রহণ করে তাহলে এই সমস্যা আরও প্রকট হতে পারে।
৪. আপনার স্লিপ অ্যাপনিয়া আছে অথচ আপনি জানেন না
স্লিপ অ্যাপনিয়া সমস্যার কারণে অনেকেই ঘুমাতে পারেন না। আপনারও হয়তো এই সমস্যাটি আছে অথচ আপনি জানেন না। এই সমস্যার পাশাপাশি থাকতে পারে জোরে জোরে নাক ডাকা, নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসা। এই সমস্যা থেকে আপনার মস্তিষ্ক আপনাকে জাগিয়ে তোলে। আপনি বা আপনার শয্যাসঙ্গী যদি জানতে পারেন আপনার নাক ডাকা ও নিঃশ্বাসে সমস্যা হচ্ছে তবে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
৫. আপনি অনেক স্ট্রেসে আছেন 
অনেকেই স্ট্রেসে থাকার কারণে ঘুমাতে পারেন না। ঘুমালেও তাদের ঘুম সহজেই ভেঙ্গে যেতে পারে স্ট্রেসের কারণে। এর জন্য দিনের বেলায় একটু করে ব্যায়াম করতে পারেন, ল্যাভেন্ডার অয়েলের সুগন্ধি রাখতে পারেন ঘরে। এই স্ট্রেস দূর করতে পারলে ঘুম আসবে সহজে।
৬. ত্বক জ্বালাপোড়া ও চুলকানি
একজিমার মতো ত্বকের সমস্যাগুলো ঘুমের ব্যঘাত ঘটাতে পারে। একজিমার ফলে ইমিউন সিস্টেমে পরিবর্তন আসে এবং ইনফ্ল্যামেশনের কারণে রোগীর ঘুম ঠিকমতো হয় না। একজিমার রোগীদের চুলকানি সন্ধ্যা থেকে বাড়তে থাকে। ফলে তারা সহজে ঘুমাতে পারেন না এবং ঘন ঘন ঘুম থেকে জেগে ওঠেন। এমন সমস্যা আপনারও হয়ে থাকলে ডাক্তারের সাথে কথা বলে সমাধানের ব্যাপারে জেনে নিন।
এ সমস্যা দূর করতে যা করনীয়- 
♦ শুয়ে থেকেও যদি ঘুম না আসে, তাহলে একটু হাঁটাচলা করুন, স্ট্রেচ করতে পারেন। নিজেকে রিল্যাক্স করুন, এরপর আবার বিছানায় যান
♦ ফোন বা ট্যাবলেট বেডরুম থেকে বের করে দিন
♦ পোষা প্রাণীকে বেডরুমে রাখবেন না

Sunday, March 19, 2017

আপনার সন্তান হয়তো সব রকম খাবার খেতে চায় না। কিন্তু ব্রেনের সঠিক বিকাশের জন্য কয়েকটা খাবার‚ যার মধ্যে ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড বেশি পরিমাণে থাকে তা রোজকার ডায়েটে থাকা খুব জরুরি। তাই বাচ্চাকে যদি অন্যদের থেকে স্মার্ট আর বুদ্ধিমান করে তুলতে চান তাহলে অবশ্যই নিচের এই দশটা খাবার খাওয়াতে হবে।

আপেল:
বাচ্চা হোক বা বুড়ো ফল সবার জন্যেই ভালো। সবরকমের ফলই বাচ্চাদের উপকারে আসবে। কিন্তু আপেলে এক ধরণের অ্যান্টি অক্সিডেন্ট পাওয়া যায় যার নাম Quercetin। এটা ব্রেনের বিকাশের জন্য খুব ভালো। পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে বাচ্চারা রোজ একটা করে আপেল খেয়েছে তাদের মনঃসংযোগ অন্যদের থেকে অনেক বেশি|

ডিম:
ডিমের কোনো জুড়ি হয় না। এটা শুধুনাত্র বাচ্চার ব্রেনের বিকাশ ঘটায় তাই নয়‚ সারা শরীর হেলদি রাখে। এছাড়াও নিয়মিত ডিম খেলে স্মৃতি শক্তিও বাড়ে। বেশির ভাগ বাচ্চাই ডিম খেতে ভালোবাসে। তাছাড়াও ডিমের এত রকমের প্রিপারেশন হয় যে রোজ ডিম সেদ্ধ বা ডিমের পোচ না দিলেও চলবে।

মাছ:
মাছে ওমেগা৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে যা বাচ্চাদের ব্রেনের বিকাশের জন্য অত্যন্ত জরুরী। এছাড়াও মেমরি লস হতে দেয় না।

দই:
দইয়ের মধ্যে ক্যালাসিয়াম আর প্রোটিন পাওয়া যায় যা বাচ্চার স্বাস্থ্যের জন্য খুব জরুরী। এছাড়াও দইয়ের মধ্যে প্রোবায়োটিকস আছে যা ব্রেনের বিকাশের সাহায্য করে। এছাড়াও দেখা গেছে দই খেলে বাচ্চার মুডেরও পরিবর্তম ঘটে।

ওটমিল:
এত দিনে নিশ্চই জেনে গেছেন চিনি দেওয়া কর্ণফ্ল্যেক্স বা অন্য কোনো মিষ্টি মেশানো ব্রেকফাস্ট খাওয়া কতটা ক্ষতিকারক। তাই সকালে এইসব না দিয়ে বাচ্চাকে ওটস খাওয়ান। ওটস শরীর থেকে ব্যাড কোলেস্ট্রোল শুষে নেয় ফলে বাচ্চার ব্রেনের আর্টারী পরিষ্কার থাকে। এর ফলে বাচ্চার স্মৃতিশক্তি বাড়ে। বাচ্চা ওটস খেতে না চাইলে তাতে কাজু‚ কিসমিশ‚ স্ট্রবেরি‚ চেরি মিশিয়ে দিন।

অলিভ অয়েল:
অলিভ অয়েলে ম্যনো স্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড পাওয়া যায়, যা বাচ্চা বা বুড়ো সবার সুস্বাস্থ্যের জন্যেই দরকারী। তাই রেগুলার তেলের বদলে অলিভ অয়েল দিয়ে রান্না করার চেষ্টা করুন। অবশ্য ভাজাপোড়া যতটা কম খাওয়াবেন তত ভালো। কারণ অলিভ অয়েলেই ভাজুন বা এমনি তেলে‚ ভাজাভুজি সব সময়ই শরীরের জন্য ক্ষতিকারক।

আমন্ড:
ফ্যাটি অ্যাসিড ছাড়াও এতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন পাওয়া যায় যা ড্যামেজড ব্রেন সেল রিপেয়ার করে। এছাড়াও স্মৃতি শক্তি বাড়াতেও সাহায্য করে আমন্ড বাদাম। এমনি না খেতে চাইলে আমন্ড বাদাম দিয়ে মিল্ক শেক বানিয়ে দিন বাচ্চাকে।

গ্রিন লিফি ভেজিটেবিলস:
গ্রিন লিফি ভেজিটেবল যেমন পালং শাকে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট পাওয়া যায় যা ব্রেনের বিকাশ ঘটায়। এছাড়াও বাচ্চাদের স্মৃতিশক্তি বাড়াতেও সাহায্য করে পালং শাক।

অ্যাভোকার্ডো:
আমাদের শরীরে যা দরকার হয় মোটামুটি সবই এই ফলে পাওয়া যায়। উপরন্তু এতে গুড ফ্যাট আছে যা বাচ্চার ব্রেনকে ডেভেলপ করতে সাহায্য করে। তবে বাচ্চাদের এর টেস্ট হয়তো ভালো নাও লাগতে পারে। তাই এর স্যান্ডউইচ বানিয়ে দিন। বা চিপসের সঙ্গেও খাওয়াতে পারেন অ্যাভোকার্ডো দিয়ে।

আখরোট:
আমরা ছোটবেলায় অনেকেই ভাবতাম এটা মাথার ঘিলুর মতো দেখতে তাই এটা মাথার জন্য ভালো। সেই ভাবনায় কিন্তু কোনো ভুল ছিল না। আখরোটে ওমেগা ৩ পাওয়া যায়‚ যা হলো গিয়ে আল্টিমেট ব্রেন বুস্টার। এছাড়াও এতে ভিটামিন E আছে যা ব্রেন সতেজ রাখে।

Saturday, March 18, 2017

গর্ভাবস্থায় মায়েদের অনেক বিষয়ের দিকে নজর রাখতে হয়। এ সময় ভ্রূণের সঠিক বৃদ্ধির জন্য নারীদের স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হয়। তবে না জেনেই গর্ভাবস্থায় স্বাস্থ্যকর ভেবে এমন অনেক খাবার খাওয়া হয়, যেগুলো গর্ভাবস্থায় খাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ। অনেক খাবার আছে যা স্বাস্থ্যকর হলেও গর্ভপাতের কারণ হতে পারে। বিশেষ করে গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসে এসব খাবার এড়িয়ে যাওয়া জরুরি।  তাই এ সময় সর্তকতার সঙ্গে খাবার গ্রহণ করা উচিত। দেখে নিন যেসব খাবার গর্ভাবস্থায় এড়িয়ে চলাই ভালো-    

আনারস
আনারস বা আনারসের জুস খাওয়া গর্ভপাতের কারণ হতে পারে। আনারসের মধ্যে রয়েছে ব্রোমেলেইন। এটি গর্ভপাতের  জন্য দায়ী। তাই গর্ভাবস্থায় এই খাবার এড়িয়ে যাওয়া ভালো।

বেগুন
বেগুন আপনার পছন্দের সবজি হতেই পারে। আর সবজিটি আয়রনের অন্যতম একটি উৎস। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলেন, বেগুন এমন একটি সবজি যা মিসক্যারেজের জন্য একটি ঝুঁকিপূর্ণ কারণ হতে পারে। 

পেঁপে
পেঁপে আরেকটি ক্ষতিকর খাবার গর্ভাবস্থায়। কাঁচা ও সবুজ পেঁপের মধ্যে এক ধরনের অ্যানজাইম থাকে, যেটি গর্ভপাতের কারণ হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, পেঁপে পাকলে খাওয়া যাবে। তবে সেটিও গাছপাকা হতে হবে। বর্তমানে বেশির ভাগ সময় পেঁপে রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে পাকানো হয়। এসব পাকা পেঁপেও ক্ষতিকর। 

প্রাণীর লিভার
লিভার বেশ স্বাস্থ্যকর খাবার। এতে ভিটামিন-এ ভরপুর রয়েছে। তবে গর্ভের শিশুর জন্য এটি বেশ ঝুঁকিপূর্ণ খাবার। মাসে এক বা দুবার খেলে এটি বেশি ক্ষতি করবে না। তবে প্রতিদিন খেলে ভ্রূণের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

ব্রকোলি
ব্রকোলিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। এই অতিরিক্ত ভিটামিন সি গর্ভের শিশুর জন্য খুব একটা উপকারী নয়। বিশেষ করে গর্ভধারণের প্রথম তিনমাসে এটি যদি আপনি আপনার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখেন,তাহলে হতে পারেন গর্ভপাতের শিকার। 

পুঁইশাক
পুঁইশাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন কে এবং আয়রন। কিন্তু আপনি যদি আপনার গর্ভকালীন অবস্থায় নিয়মিত খাদ্যতালিকায় এই সবজিটি রাখেন,তাহলে তা গর্ভপাতের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। আর যদি খেতেই চান তাহলে মাসে একবারের বেশি নয়। সবচেয়ে ভালো হয় পুঁইশাক এড়িয়ে চলতে পারলে।

অ্যালোভেরা
অ্যালোভেরা চুল, ত্বক এবং হজমের জন্য ভালো। তবে গর্ভাবস্থায় অ্যালোভেরা জুস খাওয়া এড়িয়ে যাওয়া উচিত। এটি গর্ভপাত ঘটাতে পারে।
 
বীট
বীটে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন কে এবং আয়রন, যা খাওয়া গর্ভবতী মায়েদের জন্য ঠিক নয়। তাছাড়া বীট গরমজাতীয় সবজি, যা গর্ভকালে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণের কারণ হতে পারে। 

সজনে
এতে রয়েছে ভিটামিন, আয়রন ও পটাশিয়াম। এগুলো শরীরের জন্য ভালো। তবে এতে আলফা সিটোসটেরল নামে এক ধরনের উপাদানও রয়েছে, যা গর্ভাবস্থায় গ্রহণ করা ক্ষতিকর। এটি গর্ভপাত ঘটাতে পারে।

তিলের বীজ
গর্ভবতী নারীদের তিলের বীজ বেশি খাওয়া উচিত নয়। তিলের বীজ মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খেলে গর্ভপাত হতে পারে। তাই এই খাবারও এড়িয়ে যান।

কাঁকড়া
অনেকে কাঁকড়া খেতে পছন্দ করেন। এর মধ্যে রয়েছে উচ্চ পরিমাণ ক্যালসিয়াম। তবে গর্ভাবস্থায় বেশি কাঁকড়া খাওয়া এড়িয়ে যাওয়া উচিত। এটি জরায়ুকে সংকুচিত করে অভ্যন্তরীণ রক্তপাত ঘটায়। এ ছাড়া এতে উচ্চমাত্রায় কোলেস্টেরল রয়েছে। এটিও গর্ভবতী নারীর জন্য ক্ষতিকর।


হুট করে মাথাব্যথা শুরু হওয়া বা মাইগ্রেইনের সমস্যা বেড়ে যাওয়ার মূলে থাকতে পারে জীবনযাপনে কিছু ভুল অভ্যাস। এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে কিছু বিষয় মাথায় রাখা উচিত। জেনে নেয়া যাক তেমনই কিছু ব্যাপার-

# দিনের শুরুতে ক্যাফেইন এড়িয়ে চলুন: মাথাব্যথা কমাতে চা বা কফি সহায়ক এমন ধারণা বেশ পুরাতন। কিন্তু ক্যাফেইনের কারণে অ্যাসিডিটিও হতে পারে। তাছাড়া পানি শূণ্যতারও কারণ হতে পারে অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণ। ফলে মাথাব্যথা কিছুটা সময় কমলেও তা আবার বেড়ে যেতে পারে। এ কারণেই এই অভ্যাস ত্যাগ করা ভালো।

# পানি পান: শরীরের দূষিত পদার্থ দূর করার জন্য পানি অত্যন্ত কার্যকর। মাথাব্যথা উপশমেও পানি বেশ ভালো ফল দেয়। তাই পানিশূণ্যতা এড়াতে প্রতিদিন ১০ গ্লাস পানি পান করা উচিত।

# খাদ্যাভ্যাস: যে কোনো খাবারে ‘মোনোসোডিয়াম গ্লুটামেইট বা এমএসজি’ নামক উপাদানের আধিক্য মাথাব্যথা বৃদ্ধি করতে পারে। তাই খাবার খাওয়ার আগে এর পুষ্টি উপাদানগুলো সম্পর্কে জানা থাকা জরুরি।

# ক্ষারযুক্ত খাবার: সবুজসবজি, ফল এবং অন্যান্য ক্ষারযুক্ত খাবার মাথাব্যথা কমাতে সহায়ক। তাছাড়া ওজন নিয়ন্ত্রণেও এই খাবারগুলো বেশ কার্যকর।

# অতিরিক্ত চিনি এড়িয়ে চলুন: চিনি মাইগ্রেইনের বড় শত্রু। তাই প্রতিদিনের খাবারের তালিকা থেকে অতিরিক্ত চিনি বাদ দিয়ে দেওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
প্রতিনিয়তই আমরা পেটে গ্যাসের সমস্যায় ভুগি। যাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা আছে তাদের যে কোন খাবার থেকেই গ্যাসের সমস্যা হতে পারে। সারাদিন কাজের চাপে অথবা ঠিকমত খাবার না খাওয়ার কারণেও গ্যাসের সমস্যা হতে পারে।

পেটে গ্যাস হওয়া আমাদের হজম প্রক্রিয়ারই একটি অংশ, এটা ছাড়া ঠিকমতো হজম প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় না। গ্যাস্ট্রিক সমস্যা তখনই হয় যখন এই গ্যাস অতিরিক্ত হারে তৈরি হতে থাকে এবং সময়মতো বের হতে পারেনা। তাছাড়া বুক জ্বালা পোড়া, বমি বমি ভাব, টক ঢেঁকুর উঠাও গ্যাস্ট্রিকের লক্ষণ।

যেহেতু হজম প্রক্রিয়া থেকেই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা সৃষ্টি হয় সেহেতু খাবার থেকেই এই সমস্যার সমাধানও পাওয়া যায়। গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করে এমন কিছু খাবার সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।

আদা:
প্রত্যেক বেলার প্রধান খাবার গ্রহণের পরে তাজা ছোট এক টুকরা আদা চিবিয়ে খেতে পারেন। অথবা আদা চা খেতে পারেন। কয়েক টুকরা আদা পানির মধ্যে দিয়ে ফুটিয়ে নিয়ে আদা চা তৈরি করা হয়। দিনে ২-৩ বার আদা চা খেলে গ্যাস কমে যায়।

পানি:
প্রতিদিন ৮ গ্লাস পানি পান করলে অনেক সমস্যা থেকেই মুক্তি মিলবে। শরীরের বিষাক্ত পদার্থ দূর করে দ্রুত খাবার হজমে সাহায্য করে পানি। এতে কমে যায় অ্যাসিডিটি।

দারুচিনি:
এক গ্লাস গরম দুধের মধ্যে এক চামচ দারুচিনির গুঁড়া ভালো করে গুলিয়ে পান করুন। সাথে মধুও মেশাতে পারেন। অথবা এক গ্লাস গরম পানিতে এক চামচ দারচিনির গুঁড়া ভালো করে মিশিয়ে ২-৩ মিনিট পরে পান করুন।

ঘোল:
ঘোল বা লাবান পান করলে গ্যাস্ট্রিক কমে যায়। সকালে ঘুম থেকে উঠে এক গ্লাস ঘোল পান করুন। গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর হয়ে যাবে।

রসুন:
রসুনের স্যুপ খেলে গ্যাস্ট্রিক কমে যায় এবং হজম প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়। কিছু পরিমাণ রসুন পিষে পানিতে মিশিয়ে কয়েক মিনিট ধরে ফোটান। এর সাথে গোলমরিচ এবং জিরা মিশিয়ে কিছুক্ষণ রেখে ঠাণ্ডা করুন। ঠাণ্ডা হলে মিশ্রণটি পান করুন। এভাবে দিনে দুই থেকে তিন বার ব্যবহার করতে থাকলে গ্যাস্ট্রিক কমে আসবে।

মৌরি:
চিবিয়ে খেতে পারেন। অথবা গরম পানির মধ্যে কিছু পরিমাণ মৌরি মিশিয়ে ৫ মিনিট ধরে ঠাণ্ডা করুন। ৫ মিনিট পরে পান করুন। গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা  দূর হয়ে যাবে।

হলুদের পাতা:
হলুদের পাতা কুচি করে কেটে প্রতিদিন দুধের সাথে মিশিয়ে পান করে নিন। এতে করে পেটে ব্যথা এবং গ্যাসের সমস্যার সমাধান হবে। ২ কাপ পানিতে পেয়ারা পাতা দিয়ে ফুটিয়ে নিন। পানি ১ কাপ পরিমাণে হলে ছেঁকে পান করুন। এতেও বেশ ভালো উপকার হবে।

আনারস:
আনারস খেলে অ্যাসিডিটি কমে যায়।

বেকিং সোডা ও লেবু:
বেকিং সোডা পেটের অ্যাসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে তাৎক্ষণিক রেহাই পেতে সাহায্য করে। একটি গ্লাসে অল্প পরিমাণ তাজা লেবুর রসের মধ্যে কিছু পরিমাণ বেকিং সোডা ঢেলে দিন। মিশ্রণটি জমে গেলে তার উপর পানি এবং আর একটু বেকিং সোডা মিশিয়ে ভালভাবে গুলিয়ে নিন। আস্তে আস্তে মিশ্রণটি পান করুন। খালি পেটে এক গ্লাস পানির মধ্যে ১/৪ চা চামচ বেকিং সোডা মিশিয়ে পান করলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর হয়ে যায়।
স্বাস্থ্য সুরক্ষায় অনেকেই সারা বছর শরীরচর্চা করেন। কেউ কেউ খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে তারা বেরিয়ে পড়েন মর্নিং ওয়ার্কে। কেউ আবার ট্রাকস্যুট, স্নিকার পরে খানিকটা দৌড়ে নেন।

তবে আচমকা অত্যাধিক শরীরের প্রতি যত্নশীল হয়ে পড়াটা মুশকিল। এক ঝটকায় এতটা যত্ন শরীর মানিয়ে নাও নিতে পারে। এতে আপনি আরও অসুস্থ হতে পারেন। তাই শরীরচর্চার আগেই কিছু কৌশল জেনে রাখা জরুরি। এতে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় পাশাপাশি বিপদের হাত থেকেও বাঁচা যাবে।

দৌড়ানোর সময় শ্বাস নেওয়ার কৌশল সম্পর্কে আগেই জেনে নেয়া যাক।

নাক এবং মুখ:
দৌড়ানোর সময় শ্বাস-প্রশ্বাসের সময় নাক এবং মুখ একইসঙ্গে ব্যবহার করুন। নাক দিয়ে শ্বাস গ্রহণ করে মুখ দিয়ে শ্বাস ত্যাগ করুন। এতে ফুসফুসের উপরে চাপ কম পড়বে।

মধ্যচ্ছদা:
দৌড়নোর সময় শুধু বুকের ছাতিই নয়, আপনার পাকস্থলীও প্রসারিত হওয়া জরুরি। একইভাবে শ্বাস ত্যাগের সময় মধ্যচ্ছদা পর্দা যাতে ঠিকঠাক সংকোচন হয় তাও খেয়াল রাখবেন।

পায়ের ছন্দ:
প্রতি শ্বাস গ্রহণ এবং শ্বাস ত্যাগের সময় লক্ষ্য রাখবেন যাতে দু’বার করে পা মাটিতে পড়ে। দৌড়নোর সময় শ্বাস-প্রশ্বাসের সময় পায়ের এই ছন্দ মেলানোটাও কিন্তু ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।

অঙ্গভঙ্গি:
মাথা উপরের দিকে রাখুন এবং কাঁধ পিছনের দিকে। এই সময় সঠিক অঙ্গভঙ্গি দেহে প্রয়োজনীয় মাত্রার অক্সিজেন পৌঁছে দিতে সাহায্য করে।

অভ্যাস:
সবশেষে মনে রাখবেন। প্রতিদিন দৌড়ানোর আগে এই অভ্যাসগুলো মেনে চলা খুবই উপকারী। দু’দিনের জন্য না করে অভ্যাসটি বজায় রাখুন। এতে আপনার স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে যাবে।
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়তে থাকে। যাদের বয়স ২০ বছর বা তার বেশি, তাদের রক্তে প্রতি পাঁচ বছর অন্তর একবার পরীক্ষা করে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা দেখা উচিত। এ মাত্রা যদি ২০০ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটারের বেশি হয় কিংবা কম ঘনত্বের লিপোপ্রোটিন কোলেস্টেরলের (ক্ষতিকারক কোলেস্টেরল) মাত্রা ১০০ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটারের বেশি হয়, তাহলে এগুলো রক্তে অস্বাভাবিক মাত্রায় বিরাজ করে- এ অবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শে পরিমাণ কমানো উচিত। সাধারণত জীবনাচরণ পদ্ধতি পরিবর্তন করে এবং প্রয়োজন হলে ওষুধ সেবন করে ছয় সপ্তাহের মধ্যে এর পরিমাণ স্বাভাবিক মাত্রায় আনা যায়। রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা স্বাভাবিক পর্যায়ে রাখা কঠিন কাজ নয়।
কোলেস্টেরলের কাক্সিক্ষত মাত্রা নির্ধারণ : আপনাকে অবশ্যই জানতে হবে শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা কত এবং আপনি কতটুকু কমাতে চান। এটা অনেক উপাদানের ওপর নির্ভর করে। যেমন- পরিবারের বা বাবা-মায়ের হৃদরোগের ইতিহাস আছে কিনা এবং আপনার হৃদরোগ হওয়ার মতো ঝুঁকি রয়েছে কি না, যেমন- উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ধূমপানের অভ্যাস, অতিরিক্ত মেদভুঁড়ি ইত্যাদি। যাদের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি, তাদের কম ঘনত্বের কোলেস্টেরল বা ক্ষতিকারক কোলেস্টেরলের মাত্রা ৭০ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটারের নিচে থাকা উচিত। যাদের হৃদরোগের কোনো ঝুঁকি উপাদান নেই, তাদের ১৬০ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটারের নিচে রাখা যেতে পারে
প্রয়োজনে ওষুধ সেবন করতে হবে : যাদের কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি, তাদের অবশ্যই জীবনাচরণ পদ্ধতি পরিবর্তন করতে হবে। যদি হৃদরোগের উপসর্গ থাকে, তাহলে কোলেস্টেরল কমানোর ওষুধ সেবন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ধূমপান পরিহার করা, ওজন কমানো যেমন জরুরি, তেমনি ওষুধ সেবন করাও দরকার।
জীবনাচরণ পরিবর্তনের পাশাপাশি কোলেস্টেরল কমানোর ওষুধ সেবন করলে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা দ্রুত স্বাভাবিক হয়ে আসে।
কোলেস্টেরল কমানোর জন্য নানা রকম ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে, যেমন- নিয়াসিন, ফাইব্রেটস স্টেটিনস ইত্যাদি। স্টেনিটন রক্তের ক্ষতিকারক কোলেস্টেরল ২০ থেকে ৫০ শতাংশ কমাতে পারে।
হাঁটুন এবং ব্যায়াম করুন : শারীরিক পরিশ্রম ও ব্যায়াম শুধু রক্তে ক্ষতিকারক কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমায় না, উপকারী কোলেস্টেরলের পরিমাণ (বেশি ঘনত্বের লিপোপ্রোটিন কোলেস্টেরল) ১০ শতাংশ বাড়ায়। জোরে জোরে হাঁটলেও এমন উপকার পাওয়া যায়। নৈশভোজের পর কমপক্ষে ৪৫ মিনিট হাঁটুন। কেউ যদি প্রতিদিন সিঁড়ি বেয়ে ওঠানামা করেন, তাহলে উপকৃত হবেন। কেউ যদি অফিসে চাকরি করেন, তার উচিত অন্তত প্রতি ঘণ্টায় পাঁচ মিনিট হাঁটা বা চলাফেরা করা। আপনি যে ধরনের ব্যায়াম করুন না কেন, তা নিয়মিত করতে হবে।
চর্বি জাতীয় খাবার পরিহার করুন : কোলেস্টেরল কমানোর সহজ উপায় হচ্ছে ডিমের কুসুম এবং অন্যান্য বেশি কোলেস্টেরলযুক্ত খাবার পরিহার করা। তবে শুধু খাবারের কোলেস্টেরলই রক্তে কোলেস্টেরল বাড়ানোর জন্য দায়ী নয়। সম্পৃক্ত চর্বিযুক্ত খাবার যেমন- মাখন, চর্বিযুক্ত গরুর মাংস ও খাসির মাংসের পরিবর্তে অসম্পৃক্ত চর্বিযুক্ত খাবার যেমন- সয়াবিন তেল, সূর্যমুখী তেল, জলপাইয়ের তেল, মাছ পর্যাপ্ত খাওয়া উচিত।
আঁশযুক্ত খাবার বেশি খান : সবজি এবং ফলমূল শরীরের জন্য উপকারী। এগুলো রক্তে কোলেস্টেরলও কমায়। দ্রবণীয় আঁশ পরিপাক নালি থেকে স্পঞ্জের মতো কোলেস্টেরল শুষে নেয়। শিম, বার্লিতে প্রচুর আঁশ থাকে।
বেশি মাছ খান : মাছ ও মাছের তেল কোলেস্টেরল হ্রাস কের। এর মধ্যে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড থাকে। এটি রক্ত থেকে কোলেস্টেরল এবং অন্যান্য ক্ষতিকর চর্বি কমিয়ে ফেলে। সপ্তাহে অন্তত দুই থেকে তিনবার মাছ খাওয়া উচিত। অধিকাংশ মাছেই ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড থাকে। মাছ খেতে অনিচ্ছুকরা মাছের তেল থেকে তৈরি ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডসমৃদ্ধ ক্যাপসুল চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করতে পারেন। বিভিন্ন উদ্ভিদজাত খাবারেও ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড পাওয়া যায়। যেমন- সয়াবিন তেল, কাঠবাদামের তেল ইত্যাদি।
মদ্যপান পরিহার করুন : অ্যালকোহলযুক্ত পানীয় পান শরীরের জন্য ক্ষতিকারক। মদ সেবন থেকে বিরত থাকতে হবে।
ধূমপান পরিহার করুন : ধূমপান করলে রক্তে উপকারী কোলেস্টেরল বা বেশি ঘনত্বের কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমে যায়। রক্তের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে অবশ্যই ধূমপান ছেড়ে দিতে হবে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখুন : অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস রক্তের কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। রক্তে কোলেস্টেরল কমাতে হলে অবশ্যই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। এজন্য চিকিৎসকের পরামর্শ যথাযথভাবে মেনে চলতে হবে।
লেখক : হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ, এম এইচ শমরিতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, ঢাকা

শরীরে উচ্চমাত্রায় ক্ষতিকর কোলেস্টেরল থাকলে হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি বাড়ে। তবে নিয়মিত ব্যায়ামের পাশাপাশি রসুন, আমলকী ও মেথির মতো খাবার কাজে লাগতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, আপনার দৈনন্দিন ডায়েট ভালো স্বাস্থ্যের লক্ষ্য পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। উচ্চমাত্রার খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে যেসব খাবার কাজে লাগাতে পারেন, তা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে এনডিটিভি। চলুন জেনে আসি এসব খাবার সম্পর্কে:

রসুন: রান্নাঘরেই পাবেন রসুন। স্বাস্থ্যকর রসুনের গুণাগুণ অনেকের জানা। রসুনে আছে অ্যামাইনো অ্যাসিড, ভিটামিন, খনিজ ও অর্গানোসালফার যৌগ। এই যৌগ ঔষধি গুণ হিসেবে কাজ করে। বেশ কয়েকটি বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে, শরীরে বাজে কোলেস্টেরল কমাতে কার্যকর রসুন। এটি রক্তচাপ কমানোর ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর রসুন দৈনিক অর্ধেক বা এক কোয়া করে খেলে কোলস্টেরলের মাত্রা ৯ শতাংশ কমতে দেখা যায়।

গ্রিন টি: গ্রিন টি বা সবুজ চায়ে আছে পলিফেনল। এটি মানুষের শরীরে দারুণ উপকার দেয়। এটি শরীরের বাজে কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। গ্রিন টি আমাদের শরীরকে সতেজ ও উৎফুল্ল রাখতে সাহায্য করে। এটি হৃদ্‌রোগ ও ক্যানসারের ঝুঁকিও কমায়। নিয়মিত গ্রিন টি পান করলে শরীরের মেদ কোষে বেশি শর্করা ঢুকতে পারে না। ফলে এই চা আমাদের শরীরের ওজন ও রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।

ধনে: আমাদের দেহে এলডিএল নামক একধরনের ক্ষতিকর কোলেস্টেরল থাকে, যা দেহের শিরা-উপশিরার দেয়ালে জমে হৃৎপিণ্ডে রক্ত চলাচলে সমস্যা বাড়ায়। এর কারণে হার্ট অ্যাটাক হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ধনে এই ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমিয়ে দেয়। আবার দেহের জন্য ভালো বা উপকারী একধরনের কোলেস্টেরল, এইচডিএলর মাত্রা বাড়িয়ে দিয়ে শরীর সুস্থ রাখতেও সাহায্য করে এই ধনে।

মেথি: মেথিকে মসলা, খাবার, পথ্য—তিনটিই বলা চলে। স্বাদ তিতা ধরনের। এতে রয়েছে রক্তের চিনির মাত্রা কমানোর বিস্ময়কর শক্তি ও তারুণ্য ধরে রাখার বিস্ময়কর এক ক্ষমতা। যাঁরা নিয়মিত মেথি খান, তাঁদের বুড়িয়ে যাওয়ার গতিটা অত্যন্ত ধীর হয়। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে মেথি চিবিয়ে খেলে বা এক গ্লাস পানিতে মেথি ভিজিয়ে রেখে সেই পানি পান করলে শরীরের রোগ-জীবাণু মরে। বিশেষত কৃমি মরে। রক্তের চিনির মাত্রা কমে। রক্তে ক্ষতিকর কোলেস্টেরল বা চর্বির মাত্রা কমে যায়। ডায়াবেটিসের রোগী থেকে শুরু করে হৃদ্‌রোগের রোগী পর্যন্ত সবাইকে তাঁদের খাবারে মেথি রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়।

আমলকী: টক আর তেতো স্বাদে ভরা আমলকী গুণে-মানে অতুলনীয়। ফলটি শুধু ভিটামিন আর খনিজ উপাদানেই ভরপুর নয়, বিভিন্ন রোগব্যাধি দূর করায়ও রয়েছে অসাধারণ গুণ। আমলকীতে থাকা ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, সর্দি-কাশি ঠেকাতে পারে। আয়ুর্বেদশাস্ত্রেও আমলকীর জুসের গুণ বর্ণনা করে বলা হয়েছে, শরীরের সব ধরনের ক্রিয়ার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে পারে তা। নিয়মিত আমলকীর জুস খেলে শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে। অ্যামিনো অ্যাসিড ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় হৃদ্‌যন্ত্র ভালো থাকে।

বিষন্নতা এমন একটি রোগ, যে রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের আবেগ-অনুভূতি এবং চিন্তা-চেতনার ব্যাপক পরিবর্তন হয়। সব সময় তারা পৃথিবীকে অশান্তিময় মনে করেন এবং দীর্ঘমেয়াদি মন খারাপ ভাব বিদ্যমান থাকে। বিষণ্নতা মানসিক রোগগুলোর মধ্যে অত্যন্ত সাধারণ এবং ধ্বংসাত্মক একটি রোগ। কারণ এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি জীবন চলার ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ে এবং কোনো কোনো রোগী অবলীলায় আত্মহত্যার মাধ্যমে মুক্তি পেতে চেষ্টা করে এবং কখনো কখনো সফল হয়। তাই আর কিছু দিনের মধ্যেই হয়তো বিষণ্নতা রোগটি পৃথিবীতে এক নম্বর ‘কিলার ডিজিজ’ হিসেবে পরিচিতি পাবে। যেকোনো লোক
যেকোনো সময়ে বিষণ্নতা রোগে আক্রান্ত হতে পারে এবং সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে শতকরা ১০০ ভাগ রোগীই ভালো হয়ে যেতে পারে। এ রোগটির স্থায়িত্বকাল স্বল্প সময় থেকে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত হতে পারে। মাত্রায় এর আবার রকমফের হয়, যা কম মাত্রা থেকে দীর্ঘ মাত্রায় হতে পারে।
মানুষের জীবন সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, হাসি-কান্না, ভালো লাগা, মন্দ লাগা প্রভৃতি নিয়েই গঠিত। যারা সুস্থ স্বাভাবিক ব্যক্তি তারা তাদের প্রতিদিনের এই সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা প্রভৃতি বিষয়গুলো খুব সহজেই ম্যানেজ করে চলতে পারেন। কিন্তু যারা বিষণ্নতা রোগে ভোগেন তারা এগুলো সহজে ম্যানেজ করে চলতে পারেন না। কারণ বিষণ্নতা রোগটি ব্যাপকভাবে তাদের মন এবং মস্তিষ্ককে আক্রমণ করে। ফলে তারা চিন্তা-চেতনা, আনন্দ-বেদনা, আবেগ-অনুভূতি প্রভৃতির স্বাভাবিক ছন্দ হারিয়ে ফেলে। দেখা যায়, কোনো আনন্দদায়ক কাজে এরা আনন্দ পাচ্ছে না। সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। উল্লেখ্য, আরেকটি বিষয় হচ্ছে, এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির মনোযোগ বা কাজকর্মের দক্ষতা আগের চেয়ে অনেক কমে যায়। এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির জীবন ক্রমান্বয়ে দুর্বিষহ হয়ে পড়ে। বিষণ্নতা রোগে যিনি ভুগছেন তিনিই জানেন কী অবর্ণনীয় কষ্ট তার মন, মস্তিষ্ক তথা সমস্ত শরীরে হয়। এটি ভাষায় প্রকাশ করে বোঝানো সম্ভব নয়। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে এসব রোগীর জীবন আরো বেশি যন্ত্রণাদায়ক হয়ে থাকে। মানসিক রোগ সম্পর্কে অজ্ঞতা, সচেতনতার অভাব, অশিক্ষা-কুশিক্ষা ও কুসংস্কার এর জন্য দায়ী। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, এসব রোগীকে ঝাড়-ফুঁক ও পানি পড়া দিয়ে যারা (ওঝা, ফকির, কবিরাজ, দরবেশ) চিকিৎসা করে থাকেন তাদের শরণাপন্ন হতো। এতে রোগীর কোনো কাজ তো হয়-ই না বরং সময় নষ্ট হয় এবং বিভিন্ন অপচিকিৎসায় রোগীর কষ্ট আরো অনেক বেড়ে যায়। একজন মনোচিকিৎসক বা মানসিক রোগবিশেষজ্ঞই পারেন বিষন্নতায় আক্রান্ত রোগীকে আবার সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে দিতে।
বিষন্নতা রোগের কারণ
অনেক কারণেই বিষণ্নতা রোগটি হতে পারে। উল্লেখযোগ্য হচ্ছে­ পারিবারিক, সামাজিক, ব্যক্তিগত, পারিপার্শ্বিকতার চাপ, বংশগত, অত্যধিক মানসিক চাপ, বেকারত্ব, প্রেম সংক্রান্ত জটিলতা, যৌন সমস্যা, আর্থিক সমস্যা প্রভৃতি। অনেক শারীরিক রোগের কারণেও এ রোগ হতে পারে।
বিষন্নতা রোগের উপসর্গ
দীর্ঘমেয়াদি অশান্তিবোধ, দুর্বিষহ জীবন, উৎসাহ-উদ্দীপনা ও আনন্দের অভাব, চিন্তা করতে না পারা, মনোযোগ দিতে না পারা, খিটখিটে মেজাজ, অরুচি বা রুচি বেড়ে যাওয়া, হজমের গণ্ডগোল, যৌনতা সম্পর্কে উৎসাহ কমে যাওয়া, মাথাব্যথা, আত্মবিশ্বাসের অভাব ও স্বাস্থ্যহীনতা, সব কিছু হারানোর ভয়, নিজেকে অপরাধী ভাবা, সারাদিন বিষণ্ন অনুভূতি, কাজ-কর্মের ধীরগতি, সিদ্ধান্ত নিতে না পারা, অস্থিরতা বা স্থবিরতা, মৃত্যু চিন্তা আসা, সব সময় মনে হয় এই মৃত্যু হবে, আত্মহত্যার চিন্তা করা বা আত্মহত্যার চেষ্টা চালানো প্রভৃতি।
বিষন্নতা রোগের চিকিৎসা
বিষন্নতা রোগটির বর্তমানে অনেক নতুন ওষুধ আবিষ্কার হওয়ার ফলে চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা সহজ হয়েছে ও রোগ নিরাময় দ্রুততর হয়েছে। মনোচিকিৎসকরা নিশ্চিত করেই বলেছেন, বিষন্নতা রোগে আক্রান্ত রোগীর শতকরা ১০০ ভাগই ভালো হয়ে যায়। মনোচিকিৎসকরা প্রথমেই বিষন্নতাবিরোধী ওষুধ একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় নির্দিষ্ট সময় ধরে খাওয়ার পরামর্শ দেন। সাধারণত এই জাতীয় ওষুধ খাওয়ার ২১ দিনের মাথায় উন্নতি পাওয়া যায়। মনোচিকিৎসকরা রোগীর উন্নতি পর্যবেক্ষণ করে ওষুধের ডোজ ধীরে ধীরে কমিয়ে পরে তা বন্ধ করে দেন। এ ছাড়া প্রয়োজনে সাইকোথেরাপি, আলো থেরাপি, ইলেকট্রোকনভালসিভ থেরাপি প্রভৃতি অত্যাধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে রোগীকে সুস্থ করে তোলেন। তাই বিষন্নতায় আক্রান্ত রোগীকে মনোচিকিৎসকের পরামর্শক্রমে সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে সহযোগিতা করতে হবে।
সারাদিন এই কাজ ওই কাজের ঝামেলার কারণে প্রচন্ড মানসিক চাপ গিয়েছে আপনার উপর দিয়ে। সারাক্ষণই এক ধরনের অস্থিরতা কাজ করেছে মনের ভেতরে। একটি ঝামেলা শেষ হতে না হতেই কাঁধে আরেকটি ঝামেলা এসে চাপে। কতক্ষণ আর মেজাজ ঠিক রাখা যায় বলুন? আর এই সারাদিনের ঝক্কি ঝামেলাগুলোই রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সময় মনে পড়তে থাকে একের পর এক করে। তখন অস্থিরতায় ঠিক মত ঘুমও আসে না।

এমন সমস্যায় অনেকেই দিন পার করছেন। দিনের বেলার কাজের চাপ ও 
মানসিক অশান্তির প্রভাব রাতের বেলা ঘুমাতে যাওয়ার সময় চেপে ধরে। ফলে রাতের ঘুমে ব্যাঘাত ঘটে এবং পরিপূর্ণ বিশ্রাম হয় না। স্বাভাবিকভাবেই মেজাজ খিট খিটে হয়ে থাকে। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে মানসিক চাপ ঝেড়ে ফেলা উচিত। আসুন জেনে নেয়া যাক রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে মানসিক চাপ ঝেড়ে ফেলার ৫টি সহজ উপায়।

হালকা গরম পানিতে গোসল
মানসিক চাপ দূর করার জন্য হালকা গরম পানিতে গোসল করার বিকল্প নেই। ঘুমাতে যাওয়ার আগে হালকা গরম পানিতে কিছুটা লেবুর রস অথবা গোলাপ জল মিশিয়ে নিন। এবার এই পানিটি পুরো শরীরে ঢেলে গোসল করে নিন। রাতে গোসল করলে যাদের ঠান্ডা লাগার সমস্যা আছে তাঁরা চুল ভেজাবেন না। এভাবে হালকা গরম পানিতে গোসল করে ঘুমাতে গেলে মানসিক চাপ অনেকটাই কম থাকবে এবং ঘুম ভালো হবে।

বুক ভরে দম নিন
দিন শেষে ঘুমাতে যাওয়ার আগে মন থেকে মানসিক চাপ দূর করতে চাইলে বুক ভরে নিশ্বাস নিন। মনে মনে এক থেকে ৫ পর্যন্ত গুনুন। এরপর ধীরে ধীরে দম ছাড়তে থাকুন। নিশ্বাস ছাড়ার সময় মনে মনে ভাবুন যে আপনি আপনার মাথা থেকে সব চাপ ঝেড়ে বের করে দিচ্ছেন নিঃশ্বাসের সাথে সাথে। প্রতিদিন ঘুমাতে যাওয়ার আগে কিছুক্ষণ এই পদ্ধতি অনুসরণ করলে মানসিক চাপ কমে যায় অনেকটাই।

স্নি আলো জ্বালুন
ঘুমাতে যাওয়ার আগে ঘরের সব উজ্জ্বল আলো নিভিয়ে স্নি আলো জ্বেলে দিন। নাইট বাল্ব, ল্যাম্প কিংবা মোম বাতির স্নি আলোতে মানসিক প্রশান্তি মেলে। এছাড়া এ ধরনের হালকা আলোতে ঘুমও ভালো হয়। তাই মানসিক চাপ দূর করে প্রশান্তি আনতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে স্নি আলো ছায়া পরিবেশ তৈরি করে নিন বেডরুমে।

হালকা মিউজিক শুনুন
মন থেকে অস্থিরতা দূর করতে হালকা মিউজিক কিংবা ধীর লয়ের গানের বিকল্প নেই। ঘুমাতে যাওয়ার আগে আপনার পছন্দের কোনও হালকা ধরনের মিউজিক বা গান ছেড়ে দিন। উচ্চ শব্দে না ছেড়ে অল্প শব্দে ছাড়ুন। তাহলে মানসিক চাপ অনেকটাই কমে যাবে এবং ঘুম ভালো হবে।

গরম দুধ খান
ঘুমাতে যাওয়ার আগে চা কফি খাবেন না। এমন কি সন্ধ্যার পর থেকে চা কফি খেলেও ঘুমে ব্যাঘাত ঘটে। ঘুমাতে যাওয়ার আগে এক গ্লাস গরম দুধ খেয়ে নিন। ঘুমাতে যাওয়ার আগে গরম দুধ খেলে শরীর ও মন শিথিল হয় এবং ঘুম ভালো হয়। 
১। পরিবারের প্রিয় মানুষটি যদি হঠাৎ নিয়মের ব্যতিক্রম করে নির্ধারিত সময়ের পরেও বাসায় ফিরে না আসে, কোন যোগাযোগও না করে তবে তার জন্য স্বজনেরা স্বভাবতই চিন্তিত হন, উৎকন্ঠিত হন। আবার আগামীকাল আপনার নিজের শরীরে একটা অপারেশন হবে  সেটা নিয়েও আপনি ভয় পাবেন, এটাই স্বাভাবিক। কোন ধরণের শারীরিক মানসিক-সামাজিক হুমকি, বিপদ বা অনাকাংক্ষিত ঘটনার আভাস পেলে আমরা সতর্কিত হই, সেটিকে মোকাবেলা করবার জন্য দেহ ও মনের এই প্রতিক্রিয়া বা আবেগকে বলা হয় ভীতি (Fear)। প্রকৃত আসন্ন বিপদ বা হুমকিকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট ভীতি কোন রোগ নয় কিন্তু কারন ছাড়া তৈরী হওয়া ভীতি বা উদ্বিগ্ন হওয়াটাই
চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় উৎকন্ঠা বা Anxiety । প্রকৃত কারণে উৎকন্ঠিত হওয়াটা কোন অস্বাভাবিকতা নয়।
২। উৎকন্ঠা বা Anxiety এর অস্বাভাবিক প্রকাশ দুইরকম ভাবে হতে পারে  প্রথমত উৎকন্ঠিত হবার মতো যথার্থ কোন কারন ( কোন আসন্ন বিপদ বা ক্ষতিগ্রস্থ হবার সম্ভাবনা ) না থাকা সত্ত্বেও যদি কেউ মনগড়া কারনে অযথা ভীতিগ্রস্থ হয়ে পড়েন। যেমন স্কুল থেকে তার সন্তান হারিয়ে যাবে শুধু এই কারনে কেউ যদি স্কুলের গেটের কাছে বসে বসে ঘামেন বা স্কুলে তার সন্তান ছাঁদ থকে পড়ে যাবে ভেবে স্কুলে পাঠানোই বন্ধ করে দেন অথবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সাপ পাওয়া গেছে খবর পড়ে কলাবাগানের এপার্টমেন্টে বসে সাপের ভয়ে সিঁটিয়ে থাকেন ইত্যাদি। দ্বিতীয়ত ভয় পাওয়ার যথার্থ কারন রয়েছে ঠিকই কিন্তু ভয় পাওয়ার প্রকাশভঙ্গির মাত্রা অর্থাৎ উৎকন্ঠার পরিমাণ অস্বাভাবিক রকম বেশী, ভয়ের কারনের অনুপাতে অনেক বেশী। 
যেমন সন্তানের স্কুল থেকে বাসায় ফিরতে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে একঘন্টা পেরিয়ে গেলে  অস্বাভাবিক উৎকন্ঠায় মা নিজেই হয়ত অজ্ঞান হয়ে গেলেন; খবরে দেখলেন মতঝিলে গাড়ি ভাংচুর হচ্ছে, বোমা ফুটছে আর সেই সময় আপনার কোন প্রিয়জন বাসার বাইরে আছেন - তিনি মতিঝিলে আছেন না কোথায় আছেন না জেনেই অযথা উৎকন্ঠিত হয়ে, ঘেমে নেয়ে চিৎকার করে পাড়া মাথায় করে ফেললেন। 
উৎস ভেদে উৎকন্ঠা আবার দু রকম  এক, বস্তুগত / স্থানগত (Objective or Situational)  টিকটিকি বা আরশোলা দেখে ভয় পাওয়া বা নৌকায় চড়তে ভয় পাওয়া, একা একা কোথাও যেতে সাহস না পাওয়া। দুই, পরিবর্তনশীল উৎকন্ঠা (Free floating anxiety)  কেউ কেউ সকল কিছু নিয়ে সবসময় উৎকন্ঠিত হন, কারো হার্ট এটাক হয়েছে শুনলে ভাবতে থাকেন আমারও তো বুকে ব্যথা হয়, আমারও হার্ট এটাক হচ্ছে, সেই তিনিই সন্তান স্কুলে গেলে ভয়ে উৎকন্ঠায় আধমরা হয়ে যান; আবার চোরের ভয়ে বাড়িতে চারটে কলাপসিবল গেটে আটটি তালা ঝুলিয়েও তার রাতে ঘুম আসে না।
৩। উৎকন্ঠা আমাদের মন থেকেই তৈরী হয়। জটিল মনস্তাত্ত্বিক স্নায়োবিক পরিবর্তনের কারনে উৎকন্ঠার উদ্ভব, Sigmund Freud এর মতে অবচেতন মনের অবদমিত কামনা বাসনা গুলো যখন সজ্ঞান চেতনায় আসতে চায় তখন তৈরী হয় মানসিক দ্বন্দ্ব; আর এই দ্বন্দ্বের প্রকাশই হচ্ছে উৎকন্ঠা। মনোবিজ্ঞানের পরিভাষায় উৎকন্ঠা বা Anxiety প্রধানত তিন প্রকার।
· জেনারেলাইজড এংজাইটি ডিসর্ডার - যেক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তি প্রায় সবসময় সবকিছু নিয়ে উৎকন্ঠিত হন, পরিবর্তনশীল উৎকন্ঠার উদাহরণে আমরা যেটা দেখতে পেয়েছি।
· ফোবিক এংজাইটি ডিসর্ডার - কোন বিশেষ বস্তু, প্রানী, পরিবেশ, পরিস্থিতির সম্মুখীন হলে উৎকন্ঠায় আক্রান্ত হওয়া। যেমন অনেক লোকের ভীড়ে গেলে উৎকন্ঠিত হওয়া(Agoraphobia) , তাই ভীড়ের জায়গা এড়িয়ে চলেন তারা। এ ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তি ঐ বস্তু বা পরিস্থিতির সম্মুখীন না হলে উৎকন্ঠিত হন না।
· প্যানিক ডিসর্ডার - কোন বস্তু বা পরিস্থিতির সম্মুখীন না হয়েও মাঝে মাঝে নিজের কল্পনা প্রসুত কারনে উৎকন্ঠিত হওয়া, যেমন রাতে শুয়ে আছে, হঠাৎ আজ  রাতে যদি আমার হার্ট এটাক হয় এটা ভেবেই নির্ঘুম রাত কাটিয়ে দিলেন। এক্ষেত্রে উৎকন্ঠিত হবার মত নূন্যতম কোন বাস্তু বা ঘটনাই উপস্থিত নেই।
৪। উৎকন্ঠার লক্ষণ নানা রকম হতে পারে -
· ভীতি গ্রস্থ হওয়া
· খিটখিটে মেজাজ
· সামান্য শব্দে উত্তেজিত হওয়া
· অস্থিরতা
· মনোযোগের অভাব
· ভুল পথে চিন্তা করা
· মুখ-জিহবা শুকিয়ে যাওয়া ও পানি পিপাসা পাওয়া
· ঢোক গিলতে অসুবিধা হওয়া
· পেটে অস্বস্তি বোধ করা
· পেট ফাঁপা ভাব
· বারবার বাথরুমে যাওয়া
· বুকে চাপ অনুভব করা
· নিশ্বাস নিতে অসুবিধা হওয়া
· বুক ধরফর করা
· মেয়েদের পিরিয়ডের সমস্যা হওয়া
· হাত পা এর কাপুঁনি হওয়া - বিশেষত হাতের আঙ্গুল কাঁপা 
· মাথা ব্যথা,গা ব্যথা,হাত পা জ্বালা করা
· ইনসমনিয়া (ঘুম কম হওয়া),হঠাৎ ঘুমের মধ্যে ভয় পেয়ে জেগে উঠা
· দুশ্চিন্তা করা
· দাঁত দিয়ে নখ কামড়ানো
· বসে বসে পা নাড়ানো
· ক্ষিধে কমে যাওয়া
· বিষন্নতা
· অবসেশন - বিশেষ কিছু নিয়ে ক্রমাগত ও বারবার চিন্তা করা (রাতে শোবার পর কয়েকবার উঠে দেখা দরজা বন্ধ করা হয়েছে কি না)
· উৎকন্ঠায় আক্রান্ত হওয়ার কারন - বিশেষ বস্তু, প্রাণী, ভীড়, সামাজিকতা ইত্যাদি এড়িয়ে চলা
· ঘাম হওয়া,বমি বমি ভাব হওয়া
· হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসা
· মৃত্যুভয় পাওয়া ইত্যাদি
সবগুলো লক্ষণ যে একই ব্যক্তির মধ্যে একসাথে পাওয়া যাবে তা কিন্তু নয়, বরং উৎকন্ঠার প্রকারভেদে কিছু লক্ষণ ভিন্ন ভিন্ন সময় দেখা যায়।

৫। মানসিক অসুস্থতার মধ্যে উৎকন্ঠা বা Anxiety নিরাময় ও নিয়ন্ত্রণযোগ্য। তবে কেবলমাত্র ওষুধ প্রয়োগ করে এ রোগের লক্ষণগুলো কমিয়ে রাখা যায় কিন্তু পুরোপুরি নিরাময় করবার জন্য বেশ কিছু প্রক্রিয়া অনুসরন করা যেতে পারে, যেমন 
· সাইকোথেরাপি বা মনোচিকিৎসা - মনোচিকিৎসকের সাহায্য নিয়ে।
· আচরণ পরবর্তন করার প্রক্রিয়া (Behaviour therapy)
· শিথিলায়ন প্রক্রিয়া (Relaxation technique)
· প্রয়োজন মতো ঘুমানো।
· খাদ্যাভ্যাস ও দৈনন্দিন অভ্যাসের পরিবর্তন - সহজপাচ্য খবার ও প্রচুর পানি পান করা।
· ক্যাফেইন সমৃদ্ধ পানীয় পরিহার করা ও অতিরিক্ত মদ্যপান কমানো।
· বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে এন্টি-এংজাইটি ওষুধ সেবন।
· চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কারনে -অকারনে ঘুমের ওষুধ খাওয়ার অভ্যাস ত্যাগ করা।
মনে রাখতে হবে একজন উৎকন্ঠিত রোগীর জন্য - উপসর্গ, রোগীর বয়স ইত্যাদি ভেদে উপরের প্রক্রিয়াগুলোর মধ্যে বাছাই করে চিকিৎসাপদ্ধতি প্রদান করা হয়।
৬। এংজাইটি থেকে সৃষ্টি হতে পারে বিষন্নতার মতো কঠিন মানসিক ব্যাধি। তাই দেরি না করে উৎকন্ঠা কমানোর জন্য মেনে চলুন কিছু নিয়ম কানুন,  আর প্রয়োজনে সহায়তা নিন চিকিৎসকের।
Powered by Blogger.

Contact us

Name

Email *

Message *

Followers

Featured Posts

Social Icons

Pages

Facebook

Video

সর্বাধিক পঠিত

Our Facebook Page

Text Widget