Saturday, March 18, 2017

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়তে থাকে। যাদের বয়স ২০ বছর বা তার বেশি, তাদের রক্তে প্রতি পাঁচ বছর অন্তর একবার পরীক্ষা করে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা দেখা উচিত। এ মাত্রা যদি ২০০ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটারের বেশি হয় কিংবা কম ঘনত্বের লিপোপ্রোটিন কোলেস্টেরলের (ক্ষতিকারক কোলেস্টেরল) মাত্রা ১০০ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটারের বেশি হয়, তাহলে এগুলো রক্তে অস্বাভাবিক মাত্রায় বিরাজ করে- এ অবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শে পরিমাণ কমানো উচিত। সাধারণত জীবনাচরণ পদ্ধতি পরিবর্তন করে এবং প্রয়োজন হলে ওষুধ সেবন করে ছয় সপ্তাহের মধ্যে এর পরিমাণ স্বাভাবিক মাত্রায় আনা যায়। রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা স্বাভাবিক পর্যায়ে রাখা কঠিন কাজ নয়।
কোলেস্টেরলের কাক্সিক্ষত মাত্রা নির্ধারণ : আপনাকে অবশ্যই জানতে হবে শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা কত এবং আপনি কতটুকু কমাতে চান। এটা অনেক উপাদানের ওপর নির্ভর করে। যেমন- পরিবারের বা বাবা-মায়ের হৃদরোগের ইতিহাস আছে কিনা এবং আপনার হৃদরোগ হওয়ার মতো ঝুঁকি রয়েছে কি না, যেমন- উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ধূমপানের অভ্যাস, অতিরিক্ত মেদভুঁড়ি ইত্যাদি। যাদের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি, তাদের কম ঘনত্বের কোলেস্টেরল বা ক্ষতিকারক কোলেস্টেরলের মাত্রা ৭০ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটারের নিচে থাকা উচিত। যাদের হৃদরোগের কোনো ঝুঁকি উপাদান নেই, তাদের ১৬০ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটারের নিচে রাখা যেতে পারে
প্রয়োজনে ওষুধ সেবন করতে হবে : যাদের কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি, তাদের অবশ্যই জীবনাচরণ পদ্ধতি পরিবর্তন করতে হবে। যদি হৃদরোগের উপসর্গ থাকে, তাহলে কোলেস্টেরল কমানোর ওষুধ সেবন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ধূমপান পরিহার করা, ওজন কমানো যেমন জরুরি, তেমনি ওষুধ সেবন করাও দরকার।
জীবনাচরণ পরিবর্তনের পাশাপাশি কোলেস্টেরল কমানোর ওষুধ সেবন করলে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা দ্রুত স্বাভাবিক হয়ে আসে।
কোলেস্টেরল কমানোর জন্য নানা রকম ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে, যেমন- নিয়াসিন, ফাইব্রেটস স্টেটিনস ইত্যাদি। স্টেনিটন রক্তের ক্ষতিকারক কোলেস্টেরল ২০ থেকে ৫০ শতাংশ কমাতে পারে।
হাঁটুন এবং ব্যায়াম করুন : শারীরিক পরিশ্রম ও ব্যায়াম শুধু রক্তে ক্ষতিকারক কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমায় না, উপকারী কোলেস্টেরলের পরিমাণ (বেশি ঘনত্বের লিপোপ্রোটিন কোলেস্টেরল) ১০ শতাংশ বাড়ায়। জোরে জোরে হাঁটলেও এমন উপকার পাওয়া যায়। নৈশভোজের পর কমপক্ষে ৪৫ মিনিট হাঁটুন। কেউ যদি প্রতিদিন সিঁড়ি বেয়ে ওঠানামা করেন, তাহলে উপকৃত হবেন। কেউ যদি অফিসে চাকরি করেন, তার উচিত অন্তত প্রতি ঘণ্টায় পাঁচ মিনিট হাঁটা বা চলাফেরা করা। আপনি যে ধরনের ব্যায়াম করুন না কেন, তা নিয়মিত করতে হবে।
চর্বি জাতীয় খাবার পরিহার করুন : কোলেস্টেরল কমানোর সহজ উপায় হচ্ছে ডিমের কুসুম এবং অন্যান্য বেশি কোলেস্টেরলযুক্ত খাবার পরিহার করা। তবে শুধু খাবারের কোলেস্টেরলই রক্তে কোলেস্টেরল বাড়ানোর জন্য দায়ী নয়। সম্পৃক্ত চর্বিযুক্ত খাবার যেমন- মাখন, চর্বিযুক্ত গরুর মাংস ও খাসির মাংসের পরিবর্তে অসম্পৃক্ত চর্বিযুক্ত খাবার যেমন- সয়াবিন তেল, সূর্যমুখী তেল, জলপাইয়ের তেল, মাছ পর্যাপ্ত খাওয়া উচিত।
আঁশযুক্ত খাবার বেশি খান : সবজি এবং ফলমূল শরীরের জন্য উপকারী। এগুলো রক্তে কোলেস্টেরলও কমায়। দ্রবণীয় আঁশ পরিপাক নালি থেকে স্পঞ্জের মতো কোলেস্টেরল শুষে নেয়। শিম, বার্লিতে প্রচুর আঁশ থাকে।
বেশি মাছ খান : মাছ ও মাছের তেল কোলেস্টেরল হ্রাস কের। এর মধ্যে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড থাকে। এটি রক্ত থেকে কোলেস্টেরল এবং অন্যান্য ক্ষতিকর চর্বি কমিয়ে ফেলে। সপ্তাহে অন্তত দুই থেকে তিনবার মাছ খাওয়া উচিত। অধিকাংশ মাছেই ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড থাকে। মাছ খেতে অনিচ্ছুকরা মাছের তেল থেকে তৈরি ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডসমৃদ্ধ ক্যাপসুল চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করতে পারেন। বিভিন্ন উদ্ভিদজাত খাবারেও ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড পাওয়া যায়। যেমন- সয়াবিন তেল, কাঠবাদামের তেল ইত্যাদি।
মদ্যপান পরিহার করুন : অ্যালকোহলযুক্ত পানীয় পান শরীরের জন্য ক্ষতিকারক। মদ সেবন থেকে বিরত থাকতে হবে।
ধূমপান পরিহার করুন : ধূমপান করলে রক্তে উপকারী কোলেস্টেরল বা বেশি ঘনত্বের কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমে যায়। রক্তের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে অবশ্যই ধূমপান ছেড়ে দিতে হবে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখুন : অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস রক্তের কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। রক্তে কোলেস্টেরল কমাতে হলে অবশ্যই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। এজন্য চিকিৎসকের পরামর্শ যথাযথভাবে মেনে চলতে হবে।
লেখক : হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ, এম এইচ শমরিতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, ঢাকা

0 comments:

Post a Comment

Powered by Blogger.

Contact us

Name

Email *

Message *

Followers

Featured Posts

Social Icons

Pages

Facebook

Video

সর্বাধিক পঠিত

Our Facebook Page

Text Widget