Tuesday, January 31, 2017

প্রাণ অর্থ শ্বাস রূপে গৃহিত বায়ু। যে ক্রিয়ায় দেহের প্রাণ শক্তি বৃদ্ধি পায়, ব্যাধি ও অকাল মৃত্যু জয় করা যায় তারই নাম প্রাণায়াম। রেচক, পূরক ও কুম্ভক—এই তিন প্রক্রিয়া দিয়ে প্রাণায়াম করা হয়। প্রাণায়াম অর্থ নিশ্বাস প্রশ্বাসের বিস্তার ও নিয়ন্ত্রণ। এই নিয়ন্ত্রণ শ্বাস-প্রশ্বাসের সব ক্রিয়ার ওপর। শ্বাস গ্রহণকে বলে পূরক, শ্বাসত্যাগকে বলে রেচক আর শ্বাস ধারণকে বলে কুম্ভক।
শ্বাস ত্যাগ করার পর যখন আমরা শ্বাস গ্রহণ করি তখন ফুসফুসে যে বাতাস প্রবেশ করে তাতে ফুসফুস মাত্র দুই-তৃতীয়াংশ প্রসারিত হয়। প্রাণায়ামে ফুসফুস সম্পূর্ণ প্রসারিত করা যায়। একজন সুস্থ মানুষ সাধারণত মিনিটে ১৭ থেকে ১৮ বার শ্বাস গ্রহণ করে। প্রাণায়ামে এই সংখ্যা ইচ্ছে মতো কমানো যায়। ঠিক মতো প্রাণায়াম করতে পারলে সর্দি, কাশি, হাঁপানি, মাথায় চোখে ও কানে যন্ত্রনা, স্নায়বিক উত্তেজনা প্রভিৃতি নানা রকম ব্যাধি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
প্রাণায়ামের উপকারিতা :
প্রাণায়াম করলে অনেক উপকার পাওয়া যায়, যেমন—সারা শরীর সতেজ হয়, সর্দি কাশি, হাঁপানি, স্নায়বিক দুর্বলতা, শারীরিক ও মানসিক শান্তি একাগ্রতার অভাব, অনিদ্রা ইত্যাদিতে অনেক উপকার পাওয়া যায়। এ ছাড়া হজম শক্তি বাড়ে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। সাইনাসের জন্য ভালো উপকার পাওয়া যায়। স্মৃতিশক্তি বাড়ে। রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। হৃৎপিণ্ড ও ফুসফুস সতেজ ও সবল হয়। অকাল বার্ধক্য দূর করা যায়। ত্বক ভালো থাকে।
এই লেখায় খুব সহজে করা যায় এমন কিছু সহজ প্রাণায়ামের পদ্ধতি বলব। যেগুলো আপনি সহজে  বাসায় করতে পারবেন এবং উপকৃত হবেন।
১) যেকোনো ধ্যান আসনে বসুন বা সোজা হয়ে দাঁড়ান। আস্তে আস্তে দুই নাক দিয়ে যতটা নিঃশ্বাস নিতে পারেন নিন। তারপর আস্তে আস্তে মুখ দিয়ে নিঃশ্বাস ছাড়ুন। যতটা সময় ধরে নিঃশ্বাস নিয়েছেন ততটা সময় ধরে নিঃশ্বাস ছাড়ুন। নিঃশ্বাস ছাড়া হয়ে গেলে আবার আগের মতো দুই নাক দিয়ে নিঃশ্বাস নিয়ে মুখ দিয়ে নিঃশ্বাস ছাড়ুন। এইভাবে তিন মিনিটে যতবার পারেন নিঃশ্বাস নিন এবং ছাড়ুন।
২) যেকোনো ধ্যান আসনে বসুন। চেয়ার বা খাটে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসতে পারেন। আপনার যেভাবে ইচ্ছা সেইভাবে বসে দুই নাক দিয়ে আস্তে আস্তে সজোরে ও সশব্দে যতখানি পারেন নিঃশ্বাস নিন। তারপর আস্তে আস্তে সজোরে ও সশব্দে দুই নাক দিয়ে নিঃশ্বাস ছাড়ুন। যতক্ষণ ধরে নিঃশ্বাস নিয়েছেন, ঠিক ততক্ষণ ধরে নিঃশ্বাস ছাড়ুন। নিঃশ্বাস নেওয়ার সময় চিবুক স্বাভাবিক স্থানে থাকবে, নিঃশ্বাস ছাড়ার সময় চিবুক নামিয়ে কণ্ঠকূপের কাছে আনবেন। এই ভাবে ৮ থেকে ১০ বার করুন ।
৩) যেকোনো ধ্যান আসনে বসুন। তারপর আস্তে আস্তে দুই নাক দিয়ে যতখানি পারেন নিঃশ্বাস নিন। নিঃশ্বাস নেওয়া শেষ হলে মুখের পেশী ও স্নায়ুর ওপর জোর দিয়ে মুখ হা করে বেশ জোর দিয়ে আস্তে আস্তে নিঃশ্বাস ছাড়ুন। যতক্ষণ ধরে নিঃশ্বাস নেবেন, ঠিক ততক্ষণ ধরে নিঃশ্বাস ছাড়বেন। এই ভাবে ৮ থেকে ১০ বার করুন ।
৪) ধ্যান আসনে  বসে দুই নাক দিয়ে আস্তে আস্তে যতখানি পারেন নিঃশ্বাস নিন। তারপর দুই ঠোঁট এক করে পাখির ঠোঁটের মতো সরু করুন এবং সজোরে থেমে থেমে মুখ দিয়ে নিঃশ্বাস ছাড়ুন। অর্থাৎ খানিকটা বাতাস বার করে দিয়ে একটু থামুন, তারপর আবার খানিকটা বাতাস বার করে দিয়ে একটু থামুন। এইভাবে নিঃশ্বাস নেওয়ার পর সব বাতাস বের করে দিন। এই ভাবে ১০ বার করুন।
এই প্রাণায়ামগুলো করলে আপনি এর উপকারিতা অনুভব করতে পারবেন। এই প্রাণায়ামগুলো ঠিকভাবে করতে না পারলেও ক্ষতির আশঙ্কা নেই। সুতরাং নির্ভয়ে এইগুলো করা যেতে পারে। আবাল বৃদ্ধ-বণিতা সবাই এই প্রাণায়াম করতে পারেন।

0 comments:

Post a Comment

Powered by Blogger.

Contact us

Name

Email *

Message *

Followers

Featured Posts

Social Icons

Pages

Facebook

Video

সর্বাধিক পঠিত

Our Facebook Page

Text Widget