Sunday, February 26, 2017

ঘুম শরীরকে চাঙ্গা করে পরবর্তী দিনের কাজের জন্য আমাদের তৈরি করে। অনেকেই রয়েছেন যাঁরা ঘুম না হওয়ার সমস্যায় ভোগেন। এই সমস্যা অবসাদ ও ক্লান্তি তৈরি করে কর্মোদ্দম কমিয়ে দেয়। যাঁরা এ ধরনের সমস্যায় ভোগেন, তাঁরা হয়তো বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ভরসা করেন ঘুমের ওষুধের ওপর। তবে বিশেষজ্ঞরা বলেন, বেশি ঘুমের ওষুধ খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তাহলে ওষুধকে এড়িয়ে কীভাবে ঘুম আসতে পারে? ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া বাতলে দিয়েছে ঘুম আসার কিছু প্রাকৃতিক উপায়ের কথা।
১. বিছানা থেকে উঠে যান
অনেকেই আছেন যাঁরা ঘুম না এলেও ঘুম আসার জন্য বিছানার এপাশ ওপাশ করতে থাকেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই খেলা বন্ধ করুন এবং বিছানা থেকে উঠে যান। ২০, ৩০, ৪০ মিনিট- যতক্ষণ না ঘুম আসে বিছানায় আসবেন না। এই ৩০ থেকে ৬০ মিনিট এমন কিছু করুন যা আপনাকে ক্লান্ত করে দেবে। এই ক্লান্তি ঘুম আসতে সাহায্য করবে। তবে খুব বেশি আলোর মধ্যে কিছু করতে যাবেন না। তাহলে হিতে বিপরীত হয়ে ঘুম একেবারেই উধাও হয়ে যেতে পারে।
২. ক্যাফেইন এড়িয়ে যান
ক্যাফেইন-জাতীয় খাবার ঘুম তাড়িয়ে দেয়। তাই ঘুমের অন্তত পাঁচ ঘণ্টা আগে শেষ চা বা কফিটুকু পান করুন। এমনকি যাঁদের ঘুম ঠিকমতো না হওয়ার সমস্যা রয়েছে, তাঁদের দুপুরের খাবারের পর কফি না খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
৩. গরম পানিতে গোসল
ঘুম না আসার সমস্যা হলে রাতে বিছানায় যাওয়ার আগে উষ্ণ গরম পানি দিয়ে গোসল করুন। এই পদ্ধতি শরীরকে শিথিল করে ঘুম আসতে সাহায্য করবে।
৪. ধ্যান
একটি চমৎকার মেডিটেশন বা ধ্যান ঘুম আসতে বেশ কার্যকর। ২০০৯ সালের একটি গবেষণায় বলা হয়, ধ্যান ইনসমনিয়া বা ঘুমের সমস্যার সঙ্গে লড়াই করে। ধ্যান মন ও শরীকে শিথিল করে। এ ছাড়া ধ্যানের সময় গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম ঘুম আসতে বেশ সাহায্য করে। 
৫. শারীরিক পরিশ্রম
শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম ঘুম আসতে কার্যকর প্রাকৃতিক ওষুধ। বিশেষজ্ঞরা বলেন, যাঁরা শারীরিক পরিশ্রম করেন, তাঁদের ঘুম ভালো আসে। তাই ভালো ঘুম হতে নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম করুন।
৬. যোগব্যায়াম
সারা বিশ্বেই যোগব্যায়াম করা ভালো ঘুম হওয়ার জন্য একটি প্রাকৃতিক উপায়ের নাম। যোগব্যায়াম শরীরকে শিথিল রাখতে সাহায্য করে এবং ভালো ঘুম হতে সাহায্য করে।
৭. অ্যারোমা থেরাপি
অ্যারোমা থেরাপির মধ্যে যে প্রয়োজনীয় ভেষজ তেল, বাথ স্ক্রার, চোখের মাস্ক ইত্যাদি ব্যবহার করা হয় সেগুলো ভালো ঘুম হতে উপকার করে। ২০০৫ সালের একটি গবেষণায় বলা হয়, ভেষজ তেলের ঘ্রাণ গভীর ঘুমের জন্য বেশ উপকারী। তাই যাঁরা ঘুম না হওয়ার সমস্যায় ভুগছেন, তাঁরা পার্লারে গিয়ে অ্যারোমা থেরাপি নিয়ে দেখতে পারেন।  
৮. শোবার ঘর
ভালো ঘুমের জন্য শোবার ঘরও হওয়া চাই উপযুক্ত। আপনি হয়তো এমন ঘরে ঘুমালেন, যার আশপাশে অনেক শব্দ হয় বা প্রচুর আলো এসে পড়ে। এগুলো ঘুমকে ব্যাহত করে। তাই শোবার ঘরের কিছু পরিবর্তন জরুরি। একটু মন দিয়ে ভাবুন কী পরিবর্তন করলে আপনার শোবার ঘরটি ঘুমের উপযুক্ত হবে? সেটা হতে পারে ম্যাট্রেসের পরিবর্তন বা জানালায় ভারী পর্দা লাগানো। এ ছাড়া ভালো ঘুমের জন্য টিভি, কম্পিউটার এসব জিনিসগুলোও শোবার ঘর থেকে দূরে রাখুন। কেননা এগুলোও ভালো ঘুমে ব্যাঘাত ঘটায়।
৯. ভেষজ চা
ঘুমের আগে চা-কফি একদম খাবেন না, তবে ক্যাফেইন ছাড়া ভেষজ চা খেতে পারেন। যেমন : ভ্যালেরিয়ান অথবা ক্যামোমিল চা ইত্যা্দি ঘুমের আগে খেতে পারেন। এগুলো ঘুম ভালো করতে সাহায্য করবে।
১০. প্রোগ্রেসিভ মাসেল রিলাক্সেন ব্যায়াম
১৯১৫ সালে আবিষ্কার হওয়া ব্যায়ামের এই পদ্ধতি এখনো পুরোনো হয়নি। প্রোগ্রেসিভ মাসেল রিলাক্সেন ব্যায়াম এমন একধরনের ব্যায়াম যা পেশিকে শিথিল করে। এটি অবসন্নতা দূর করে ঘুমের পরিমাণ বাড়ায়। তাই ফিটনেস প্রশিক্ষকের পরামর্শ নিয়ে এ ধরনের ব্যায়ামও শিখতে পারেন।
ঘুম নিয়ে মানুষের সমস্যার কোন কমতি নেই। বেশীরভাগ মানুষ সময়মত ঘুমাতে পারেন না। বিছানায় শোবার পরও ঘুম আসার কোন খবর থাকে না। যার ফলে দেখা যায় বিভিন্ন ধরণের শারীরিক ও মানসিক সমস্যা।

যাই হোক, আমাদের সকলের পর্যাপ্ত পরিমাণ ও সময়মত ঘুমের প্রয়োজন রয়েছে। এর জন্য কিছু সহজ পদ্ধতি অবলম্বন করলেই নিদ্রাজনিত সমস্যা দূর হতে পারে। আসুন জেনে নেয়া যাক, সেই জাদুকরি উপায়-
১. ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বে বই পড়ুন:
ঘুম আনয়নের সব থেকে সহজ উপায় হল বিছানায় যাবার জন্য সম্পূর্ণ তৈরি হয়ে বাতি নিভিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ুন। তারপর বিছানার পাশে হালকা আলোর বাতিতে বই পড়ুন। কোন মজাদার বই পড়ার দরকার নেই, এমন কোন বই পড়বেন যাতে আপনার বিরক্তিবোধ হয় এবং আপনি ঘুম অনুভব করেন। বই পড়ার কারনে আপনি ইলেক্ট্রনিক পণ্য অর্থাৎ মোবাইল, ট্যাব, টিভি ইত্যাদি হতে দূরে থাকবেন। যার ফলে আপনার ঘুমের সমস্যা রোধ হবে। তাই, আগামীবার থেকে আপনার বিছানায় একটি বই রাখবেন।

২. বিছানায় যাবার সময় নির্ধারণ করুন:
একটি নির্ধারিত সময়ে অবশ্যই আপনার বিছানায় যাবার জন্য নিজেকে বাধ্য করবেন। এর ফলে আপনার ঘুমের সমস্যায় যথেষ্ট উপকার পাবেন। এর ফলে শুধু আপনার শারীরিক উন্নতি নয়, মানসিকভাবেও অনেক সুফল ভোগ করবেন। একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যাবার অভ্যাস করলে সেই সময়ে প্রাকৃতিকভাবেই ঝিম ভাব চলে আসবে। তখন আপনার ঘুমাতে যেতে হবে। ছোট শিশুদের ক্ষেত্রেও একই। সময়মত ও একই সময়ে ঘুমানোর কারনে মস্তিষ্কের সেরোটোনিন ও মিলাটোনিন ঠিকমত কাজ করতে পারে। যার ফলে আপনার সার্কাডিয়ান তালের সামঞ্জস্য বজায় থাকে। তাহলে, এটা বলা বাহুল্য যে ভালোভাবে ঘুমের জন্য সঠিক সময়ে ঘুমানো অপরিহার্য।

৩. স্বাস্থ্যকর ডায়েট পদ্ধতি অনুসরণ করুন:
সবকিছুর ক্ষেত্রে সকলেই স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার পরামর্শ প্রদান করেন। আপনি শুনে অবাক হতে পারেন যে, ভালো ডায়েটের সাথে খাবারের সম্পর্ক রয়েছে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, পর্যাপ্ত পরিমাণ শাকসবজি ও ফলমূল খাবার ফলে শরীরের পালস এর গতি বৃদ্ধি পায়, যার ফলে ঘুমের সমস্যা দূর হয়। খাবারের ফলে শরীরের ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম এবং অন্যান্য অপরিহার্য খনিজ এর চাহিদা পূরণ হয়। এছাড়া সঠিক ডায়েটের কারনে শরীরের ট্রিপটোফেন এর পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। যা সঠিক সময়ে ঘুম আসার সাথে সাথে সঠিক সময়ে জাগ্রত হবার জন্য সাহায্য করে।

৪. আপনার কক্ষ ঠাণ্ডা রাখুন:
ঘুমের সময় আপনার শয়ন কক্ষটি খুব শান্ত রাখার চেষ্টা করুন। বছরের পর বছর বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে, ঘুমানোর সময় মানুষের শরীরের তাপমাত্রা আরও বৃদ্ধি পায়। তাই, যতটা সম্ভব ঘরের তাপমাত্রা ঠাণ্ডা রাখলে ঘুম ভালো হয়। তবে কক্ষের তাপমাত্রা বেশী ঠাণ্ডা করার প্রয়োজন নেই। পাখা চালিয়ে ঘুমালে বা একটি জানালা খুলে রাখলেই যথেষ্ট। দেখবেন, খুব তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়েছেন।

৫. গরম দুধ পান করুন:
আগেরদিনের মানুষেরা বিশ্বাস করত ঘুমের আগে গরম দুধ পান করলে ঘুম ভালো হয়। তাদের এই বিশ্বাস এখন বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত। মনোবিজ্ঞানীদের মতে, ঘুমাতে যাবার পূর্বে গরম দুধ পান করার ফলে মানসিক প্রশান্তি বিরাজ করে। এতে সারারাতের ঘুম ভালো হয়। শরীরের ট্রিপটোফেন এর পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। যার ফলে ঘুমের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।

এই ৫টি কাজ অভ্যাসে পরিবর্তন করলে প্রতিদিন রাতে বিছানায় যাবার মাত্র ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে ঘুম চলে আসবে। তাই যাদের ঘুম নিয়ে সমস্যা রয়েছে, তারা এ পদ্ধতিগুলো চেষ্টা করে দেখতে পারেন।–সূত্র: লাইফ হ্যাক।
মানসিক বিভিন্ন চাপের কারণে অনেক সময় মনোবল হারিয়ে ফেলি আমরা। অনেক সময় আবার চিন্তাগত ত্রুটির কারণেও মনোবল কমে যায়। আর মনোবল কমে গেলে কাজের গতি ব্যাহত হয়। এতে ব্যর্থতা, হতাশা গ্রাস করে আরো বেশি। তাই মনোবল বাড়ানো জরুরি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক সালমা পারভিন বলেন, ‘মানুষের জীবনকে চালিয়ে নেওয়ার জন্য মনোবল ধরে রাখাটা খুব জরুরি। পরিস্থিতি মোকাবিলার শক্তি মানুষকে এগিয়ে নেয়।’
মনোবল কেন কমে
মনোবিশেষজ্ঞ সালমা পারভিনের মতে :
  • যখন মানুষ তার নিজের ক্ষমতা, সীমাবদ্ধতা বা দুর্বলতা সম্বন্ধে পরিষ্কার ধারণা না রাখে, তখন মনোবল কমে যায়। এ সময় মানুষ নিজের অক্ষমতা, দুর্বলতা, সীমাবদ্ধতার দিকে বেশি মনোযোগ দেয়। আর এতে মনোবল কমে।
  • চাপমূলক পরিস্থিতিতে অনেকের মনোবল কমে যায়।
  • যখন অন্যের নেতিবাচক কথা দিয়ে বেশি প্রভাবিত হয়।
  • বারবার ব্যর্থ হতে থাকলে।
  • খুব সহজেই যেকোনো উপসংহার বা সিদ্ধান্তে পৌঁছে যাওয়ার প্রবণতা থেকে এমন হয়। চিন্তার ত্রুটিগত কারণ এর জন্য দায়ী। এতে মনোবল কমে।
  • অনেকে নিজের কাজের জন্য অন্যকে দোষারোপ করে। নিজের ব্যর্থতার দায় নিজে নিতে চায় না। এটি পক্ষান্তরে নিজের শক্তি কমায়।
  • অনেকের ব্যক্তিত্বের ধরন থাকে অল্পতেই নার্ভাস বা হতাশ হয়ে যাওয়ার। তাদের ক্ষেত্রে মনোবল কমে যায়। একবার ব্যর্থ হওয়ার পর ওই কাজ আর করতে চায় না। সাফল্যের চেষ্টা করে না। এটিও মনোবল কমিয়ে দেয়।
  • অনেকে ভাবে আমাকে পারতেই হবে বা করতেই হবে। তখন একটি বাড়তি চাপ কাজ করে। এতে মনোবল হারায়। সেটি না করে একটু বলা ভালো আমি কাজটি করার চেষ্টা করব। আর চেষ্টা করলে কিছু ভালো জিনিস আসে। এতে মনোবল বাড়ে।

মনোবল বাড়াতে
১. নিজের সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা রাখা। নিজের ইতিবাচক গুণাবলি নিয়ে পরিষ্কার ধারণা রাখতে হবে। প্রয়োজনে নিজের ভেতর ইতিবাচক যেসব জিনিস রয়েছে, সেগুলোর তালিকা তৈরি করতে হবে। নিজের ওপর বিশ্বাস রাখতে হবে—‘আমি পারি’।
২. নিজের ক্ষমতাকে অন্যের সঙ্গে তুলনা না করা। একবার ব্যর্থ হলে সেখান থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনে এগিয়ে চলা।
৩. কোনো সমস্যা সমাধান করতে না পারলে অন্যদের সহযোগিতা নেওয়া। নিজেকে বলা, অন্য কেউ পারলে আমিও পারব।
৪. প্রথমেই সবকিছু ভয়ংকর বা চাপমূলক না ভাবা। বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ বা জটিল না ভাবা।
৫. কোনো কাজে খুব হতাশ লাগলে নিজেকে বলা, আচ্ছা ঠিক আছে ‘চেষ্টা করে দেখি’। শিথিল থাকার চেষ্টা করা। এতে মনের ওপর চাপ কম পড়ে। তখন ব্যর্থতার পরিমাণ কম হয়।
৬. ব্যায়াম করা।
৭. ইতিবাচক চিন্তা বাড়ানো।
৮. ভবিষ্যৎ নিয়ে খুব বেশি চিন্তা না করে বর্তমানের নিজের কাজটা ঠিকমতো করে যাওয়া। নিজের কাজ চালিয়ে গেলে ধাপে ধাপে সফলতা আসবে।

Friday, February 24, 2017

উৎকন্ঠিত হবার মানুষের অনেক যথার্থ কারন থাকে। যেমন আপনার পরিবারের কেউ হঠাৎ কিছু না বলে মোবাইল ফোন বন্ধ করে কোন কারন ছাড়াই যদি বাসায় না ফেরে তাহলে আপনি উৎকন্ঠিত হবেন। অথবা আগামি কাল আপনার একটি জটিল অপারেশন অথবা কোন ধরণের শারীরিক, মানসিক, সামাজিক হুমকি, বিপদ বা অনাকাঙ্খিত ঘটনার আভাস পেলে আপনি সতর্কিত হবেন, সেটি মোকাবেলা করার জন্য উৎকন্ঠিত হবেন এটাই স্বাভাবিক। প্রকৃত কারণে উৎকন্ঠিত হওয়াটা কোন অস্বাভাবিকতা নয় বা এটি কোন রোগ ও নয়।


উৎকন্ঠা (Anxiety) বা এংজাইটি দুই রকম ভাবে হতে পারে, প্রথমত- উৎকন্ঠিত হবার মতো যথার্থ কোন কারন কোন আসন্ন বিপদ বা ক্ষতিগ্রস্থ হবার সম্ভাবনা) না থাকা সত্ত্বেও যদি কেউ মনগড়া কারনে অযথা ভীতিগ্রস্থ হয়ে পড়েন। যেমন স্কুল থেকে আপনার সন্তানটি হারিয়ে যাবে বা কিডনাপ হবে ভেবে স্কুলের গেটের কাছে বসে বসে ঘামেন বা স্কুলের ছাঁদ থেকে পড়ে যাবে ভেবে আপনার সন্তানকে স্কুলেই পাঠানো বন্ধ করে দেন। দ্বিতীয়ত- ভয় পাওয়ার কারন রয়েছে কিন' কারন অপেক্ষা আপনার উৎকন্ঠার পরিমান অস্বাভাবিক বেশি। যেমন- আপনার পাশের ফ্লাটে অল্প বয়সি একজনের হার্ট এটাক হয়েছে শুনে ভাবতে থাকেন আমারও তো বুকে ব্যথা হয়, আমারও হার্ট এটাক হচ্ছে। অথবা কোন বাড়ীতে চুরি হয়েছে শুনে চোরের ভায়ে চারটে কলাপসিবল গেটে আটটি তালা ঝুলিয়েও রাতে ঘুম আসছে না। দিনের পর দিন এভাবে চলতে চলতে আপনি অসুস্থ্য হয়ে পড়ছেন।

মনোবিজ্ঞানের পরিভাষায় উৎকন্ঠা বা এংজাইটি প্রধানত তিন প্রকার-

১. জেনারেলাইজড এংজাইটি ডিসর্ডার - যেক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তি প্রায় সবসময় সবকিছু নিয়ে উৎকন্ঠিত হন।
২. ফোবিক এংজাইটি ডিসর্ডার - কোন বিশেষ বস্তু, প্রানী, পরিবেশ, পরিস্থিতির সম্মুখীন হলে উৎকন্ঠায় আক্রান্ত হওয়া। যেমন অনেক লোকের ভীড়ে গেলে উৎকন্ঠিত হওয়া (Agoraphobia) , তাই ভীড়ের জায়গা এড়িয়ে চলেন তারা। এ ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তি ঐ বস্তু বা পরিস্থিতির সম্মুখীন না হলে উৎকন্ঠিত হন না।
৩. প্যানিক ডিসর্ডার - কোন বস্তু বা পরিস্থিতির সম্মুখীন না হয়েও মাঝে মাঝে নিজের কল্পনা প্রসুত কারনে উৎকন্ঠিত হওয়া, যেমন রাতে শুয়ে আছে, হঠাৎ আজ রাতে যদি আমার হার্ট এটাক হয় এটা ভেবেই নির্ঘুম রাত কাটিয়ে দিলেন। এক্ষেত্রে উৎকন্ঠিত হবার মত নূন্যতম কোন বাস্তু বা ঘটনাই উপস্থিত নেই।



উৎকন্ঠার লক্ষণ নানা রকম হতে পারে -
• ভীতি গ্রস্থ হওয়া
• খিটখিটে মেজাজ
• সামান্য শব্দে উত্তেজিত হওয়া
• অস্থিরতা
• মনোযোগের অভাব
• ভুল পথে চিন্তা করা
• মুখ-জিহবা শুকিয়ে যাওয়া ও পানি পিপাসা পাওয়া
• ঢোক গিলতে অসুবিধা হওয়া
• পেটে অস্বস্তি বোধ করা
• পেট ফাঁপা ভাব
• বারবার বাথরুমে যাওয়া
• বুকে চাপ অনুভব করা
নিঃশ্বাস  নিতে অসুবিধা হওয়া
• বুক ধরফর করা
• মেয়েদের পিরিয়ডের সমস্যা হওয়া
• হাত পা এর কাপুঁনি হওয়া - বিশেষত হাতের আঙ্গুল কাঁপা
• মাথা ব্যথা,গা ব্যথা,হাত পা জ্বালা করা
• ইনসমনিয়া (ঘুম কম হওয়া),হঠাৎ ঘুমের মধ্যে ভয় পেয়ে জেগে উঠা
দুঃশ্চিন্তা করা
• দাঁত দিয়ে নখ কামড়ানো
• বসে বসে পা নাড়ানো
• ক্ষিধে কমে যাওয়া
• বিষন্নতা
• অবসেশন - বিশেষ কিছু নিয়ে ক্রমাগত ও বারবার চিন্তা করা (রাতে শোবার পর কয়েকবার উঠে দেখা দরজা বন্ধ করা হয়েছে কি না)
• উৎকন্ঠায় আক্রান্ত হওয়ার কারন - বিশেষ বস্তু, প্রাণী, ভীড়, সামাজিকতা ইত্যাদি এড়িয়ে চলা
• ঘাম হওয়া,বমি বমি ভাব হওয়া
• হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসা
• মৃত্যুভয় পাওয়া ইত্যাদি
সবগুলো লক্ষণ যে একই ব্যক্তির মধ্যে একসাথে পাওয়া যাবে তা কিন্তু নয়, বরং উৎকন্ঠার প্রকারভেদে কিছু লক্ষণ ভিন্ন ভিন্ন সময় দেখা যায়।


মানসিক অসুস্থতার মধ্যে উৎকন্ঠা বা Anxiety নিরাময় ও নিয়ন্ত্রণযোগ্য। তবে কেবলমাত্র ওষুধ প্রয়োগ করে এ রোগের লক্ষণগুলো কমিয়ে রাখা যায় কিন্তু পুরোপুরি নিরাময় করবার জন্য বেশ কিছু প্রক্রিয়া অনুসরন করা যেতে পারে, যেমন –
• সাইকোথেরাপি বা মনোচিকিৎসা - মনোচিকিৎসকের সাহায্য নিয়ে।
• আচরণ পরবর্তন করার প্রক্রিয়া (Behaviour therapy)।
• শিথিলায়ন প্রক্রিয়া (Relaxation technique)।
• মেডিটেশন।
• আত্মসম্মোহন।
• যোগব্যায়াম - কমপক্ষে বিশ মিনিট করে প্রতিদিন।
• প্রয়োজন মতো ঘুমানো।
• খাদ্যাভ্যাস ও দৈনন্দিন অভ্যাসের পরিবর্তন - সহজপাচ্য খবার ও প্রচুর পানি পান করা।
• ক্যাফেইন সমৃদ্ধ পানীয় পরিহার করা ও অতিরিক্ত মদ্যপান কমানো।
• বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে এন্টি-এংজাইটি ওষুধ সেবন।
• চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কারনে -অকারনে ঘুমের ওষুধ খাওয়ার অভ্যাস ত্যাগ করা।

মনে রাখতে হবে একজন উৎকন্ঠিত রোগীর জন্য - উপসর্গ, রোগীর বয়স ইত্যাদি ভেদে উপরের প্রক্রিয়াগুলোর মধ্যে বাছাই করে চিকিৎসাপদ্ধতি প্রদান করা হয়।
এংজাইটি থেকে সৃষ্টি হতে পারে বিষন্নতার মতো কঠিন মানসিক ব্যাধি, এছাড়া এংজাইটি আমাদের যাপিত জীবনের গুণগত মান কমিয়ে দেয় বহুলাংশে, তাই উৎকন্ঠা নিয়ে উৎকন্ঠিত হবার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। তাই দেরি না করে উৎকন্ঠা কমানোর জন্য মেনে চলুন কিছু নিয়ম কানুন, মেডিটেশন বা যোগব্যায়াম চর্চা করতে পারেন আর প্রয়োজনে সহায়তা নিন চিকিৎসকের।

Thursday, February 23, 2017

কিছুদিন ধরে হয়তো আপনার শিশুর ঘুমে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছিল শুকনো, ঘন ঘন কাশি। তখন থেকে কাশি তার লেগেই আছে। বাড়ির কেউই ঘুমোতে পারেনি কাশির শব্দে। তবে অনেক চেষ্টার পরও কাশি থামছে না।
শিশুর রাত্রিকালীন কাশির সবচেয়ে সাধারণ কারণ হলো ভাইরাসজনিত সংক্রমণ। আর এ ধরনের অসুস্থতা অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা করা যাবে না। যেহেতু কাশি ফুসফুস দুটোকে পরিষ্কার রাখার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি, তাই আপনি এটা পুরোপুরি বন্ধ করতে চাইতে পারেন না।
যদি আপনার শিশুর ভাইরাসজনিত অসুস্থতা থাকে, তার প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সাময়িকভাবে বিকল হয়। কাশি ব্যাকটেরিয়া ও অন্যান্য অস্বস্তিকর বস্তুকে বের করে দিয়ে ফুসফুসকে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। যদি আপনি কাশিকে পুরোপুরি দমিয়ে রাখেন, আপনি তাহলে একটা মারাত্মক ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ, যেমন—নিউমোনিয়ার বিরুদ্ধে একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করলেন।
যদিও অনেক ক্ষেত্রে রাত্রিকালীন কাশিকে না ঘাঁটানোই ভালো, তবে প্রয়োজন দেখা দিলে আপনি কিছু ব্যবস্থা নিতে পারেন। এতে আপনার শিশু বেশ আরাম পাবে। সমস্যা গুরুতর মনে হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
প্রচুর পরিমাণ তরল খেতে দিন
আপনার শিশুর কাশি থাকলে তাকে প্রচুর পরিমাণে তরল পান করানো ভালো। বিভিন্ন তরল, যেমন—ফলের রস, পানি কিংবা স্বচ্ছ ঝোল কফ বের করে দেওয়ার চমৎকার সহায়ক বস্তু হিসেবে কাজ করে।
বিভিন্ন তরল খাবার শুষ্ক, শক্ত কফকে আলগা করতে পারে এবং কাশির মাধ্যমে বের করে দিতে সাহায্য করে। আর ঠান্ডার ওষুধগুলোর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মতো এগুলোর কোনো ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।
বিশেষ করে গরম পানীয়, আপনার শিশুর কাশি থাকলে বেশ আরাম দিতে পারে। অবশ্য যেকোনো ধরনের পানীয় কাশিতে আরাম দেবে।
যখন শিশুর কফ বোঝাই থাকে, সে মুখ দিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে চায়। এতে তার গলা শুকিয়ে যায় এবং কফও শুকাতে শুরু করে। মুখ ও গলা শুধু ভেজা রাখলে কফ কমে যায়।
থার্মোস্ট্যাট কমিয়ে দিন
যদি শীতকালে আপনার শিশুর কাশির আক্রমণ হয়, আপনার ঘর যদি তখন গরম করেন, আপনি অবশ্যই রাতের বেলা থার্মোস্ট্যাট বা তাপ নিয়ামক কমিয়ে দেবেন, বাড়াবেন না। গরম, শুষ্ক বাতাস কাশিকে উত্তেজিত করে তোলে। কিন্তু যদি আপনি থার্মোস্ট্যাট কমিয়ে দেন, তাহলে ঠান্ডা বাতাস কিছু আর্দ্রতা সংরক্ষণ করে রাখবে।
বাষ্পীভূত করার জন্য ব্যস্ত হবেন না
যদিও মনে হতে পারে, ভেপোরাইজার দিয়ে কিছুটা আর্দ্রতা তৈরি করা বিচক্ষণ কাজ, কিন্তু সব সময় এ ধারণা ঠিক নয়। ভেপোরাইজার পরিষ্কার রাখা কঠিন কাজ। এটা ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়ার জন্য প্রজনন ভূমি। ঠিকমতো পরিষ্কার করা না হলে এখানে ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়া জন্মে। যদি আপনার শিশুর ছত্রাকে অ্যালার্জি থাকে অথবা অ্যাজমা থাকে, তাহলে ভেপোরাইজার আপনার শিশুর কাশিকে আরো খারাপ করে তুলবে।
বুকে মালিশ করা বাদ দিন
পেট্রোলিয়াম পণ্যগুলো বুকে গরম অনুভূতির সৃষ্টি করে, এগুলো কাশি উপশমে কিছুই করতে পারে না। আর যদি শিশু নিশ্বাসের সঙ্গে এগুলো টেনে নেয় কিংবা গিলে ফেলে, তাহলে তার নিউমোনিয়া হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
অ্যান্টিহিস্টামিন দিতে চেষ্টা করুন
যদি আপনার জানা থাকে যে আপনার শিশুর কাশির কারণ অ্যালার্জি, তাহলে তাকে রাতে ঘুমোতে যাওয়ার সময় অ্যান্টিহিস্টামিন খেতে দিন, এতে সে কিছুটা ঘুমোতে পারবে। অ্যালার্জিজনিত কাশিতে অ্যান্টিহিস্টামিন সিরাপ বেশ উপকারী। প্যাকেটের নির্দেশনা অনুযায়ী আপনার শিশুর বয়স অনুপাতে তাকে সঠিক মাত্রায় ওষুধটি দিতে হবে। সঠিক মাত্রার জন্য অবশ্যই প্যাকেটের গায়ে লেখা নির্দেশনা ভালো করে পড়ে নেবেন অথবা চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন।
সঠিক কাশির ওষুধ বেছে নিন
যদি আপনার শিশু কয়েক রাত বেশ বাজে কাশি নিয়ে কাটাতে থাকে, তাহলে আপনি ডেক্সট্রোমেথরফ্যান এবং গুয়েফেনেসিন সমৃদ্ধ কাশির ওষুধ দিয়ে চেষ্টা করতে পারেন। মূলত এ দুটো উপাদানের যেকোনো সিরাপ কাজ করবে। এ ধরনের ওষুধ একটু করে মিউকাস আলগা করে এবং খুব মৃদু কাশি উপসম করে। ডেক্সট্রোমেথরফ্যান শতভাগ কার্যকর নয়, কিন্তু সেটা সত্যিকার অর্থে ভালো। কারণ, কাশি পুরোপুরি দমন করার চেষ্টা করা উচিত নয়।
সতর্কতা : শিশুর বয়স এক বছরের কম হলে তাকে শক্তিশালী কাশির ওষুধ দেবেন না। কাশির প্রতিক্রিয়া মস্তিষ্কের নিচের অংশে নিয়ন্ত্রিত হয়, তাই যদি আপনি আপনার ছোট শিশুকে কাশি দমনকারী কোনো ওষুধ দেন, তাহলে তার শ্বাস দমন করা হবে।
কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন
আপনার শিশুর কাশি হলে তাকে চিকিৎসক দেখিয়ে কাশির কারণ নির্ণয় করা গুরুত্বপূর্ণ। রাত্রিকালীন কাশি বিভিন্ন কারণে হতে পারে, যেমন : ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ, অ্যাজমা, শিশু কিছু গিলে ফেলার কারণে শ্বাসপথে আংশিক অবরুদ্ধ অবস্থা, অস্বস্তিকর ধোঁয়া ইত্যাদি। কিছু ক্ষেত্রে মারাত্মক অসুখ, যেমন—সিস্টিক ফাইব্রোসিসের কারণে কাশি হতে পারে।
আপনার শিশুকে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাবেন যদি শিশুর নিচের উপসর্গগুলো থাকে :
* সারা রাত একটানা কাশি থাকলে।
* কাশির সঙ্গে শ্লেষ্মা বের হলে।
* জ্বর থাকলে।
* শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট হলে।
* কাশি ১০ দিনের বেশি স্থায়ী থাকলে।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, অর্থোপেডিকস ও ট্রমাটোলজি বিভাগ, ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।
একটু ভালো করে ভেবে দেখলে আমরা বুঝতে পারবো যে আমাদের সকল শারীরিক ও মানসিক সমস্যার মূলে রয়েছে দুশ্চিন্তা নামক ঘুণপোকার প্রত্যক্ষ অবদান। চিন্তা যখন দুশ্চিন্তা করা নিয়ে তখন এর জন্য সঠিক সমাধাণ বের করাটা সত্যি বেশ কষ্টকর। কারণ আমাদের কাছে এমন কোন জাদুকরী কিছু নেই যার ছোঁয়ায় আমরা মুহূর্তেই সকল দুশ্চিন্তা মন থেকে গায়েব করে দিতে পারবো।
দুশ্চিন্তা (Anxiety) এমন একটি অনুভূতি যেটা মানুষ না করতে চাইলেও আপনা আপনি মাথায় চলে আসে। তাই বলে ব্যাপারটা এমন নয় যে দুশ্চিন্তা থেকে আমরা কোনভাবেই নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারবোনা। সামান্য কিছু কৌশল জানা থাকলেই দুশ্চিন্তা নামক এই ব্যাধি থেকে আমরা নিজেদের দূরে রাখতে পারি।
আসুন আপনার দুশ্চিন্তা করা নিয়ে চিন্তার সমাধানে কিছু পরামর্শ দেওয়া যাক 🙂
  • যখন দুশ্চিন্তা আপনাকে সম্পূর্ণভাবে গ্রাস করে ফেলে একবার নিজে শান্ত হয়ে বসে ভাবুন আপনার দুশ্চিন্তা মূলত কি নিয়ে। একবার যদি দুশ্চিন্তার জুতসই কোন কারণ খুঁজে বের করতে সক্ষম হন তাহলে দেখবেন দুশ্চিন্তা অনেকটাই কমে আসবে।
  • খুব বেশী দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হলে ভাবুন যে দুশ্চিন্তা করার ফলে আপনি কি কোন সমাধানে আসতে পারছেন? নাকি আপনার দুশ্চিন্তা করার এই অভ্যাসের কারণে নিজে আরও বেশী হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়ছেন? মনে রাখুন দুশ্চিন্তা করা কোন সমস্যার সমাধান নয়। এটা মেনে নিন দেখবেন দুশ্চিন্তা আপনাকে আগ্রাসন করতে পারবে না।
  • দুশ্চিন্তা করার আরেকটি অর্থ হল নিজের সময় অপচয় করা। আপনি আপনার জীবনের সমগ্র সময় থেকে যে সময়গুলো শুধুমাত্র দুশ্চিন্তা করে কাটিয়েছেন সেই সময়গুলো কেবল অপচয় হয়েছে মাত্র। এই কথাটা মনে প্রাণে বিশ্বাস করতে শিখুন। আপনার এই বিশ্বাস আপনাকে দুশ্চিন্তা থেকে দূরে রাখতে সাহায্য করবে।
  • দুশ্চিন্তাগ্রস্থ মানুষেরা নিজেদের একা রাখতে পছন্দ করে। যেটা সবচেয়ে বড় ভুল সিদ্ধান্ত। আপনি যদি কোন ব্যাপারে দুশ্চিন্তার শিকার হয়ে থাকেন, তাহলে সেটা নিজের মধ্যে চেপে না রেখে আপনার বিশ্বস্ত মানুষের সাথে আলোচনা করুন। দেখবেন আপনার দুশ্চিন্তা অনেকটা কমে যাবে।
  • যে ব্যাপারটা আপনাকে বার বার দুশ্চিন্তা করতে বাধ্য করবে সেটা আপাতত এড়িয়ে যেতে নিজেকে কাজের মধ্যে ডুবিয়ে রাখুন। এক কথায় আপনার মনোযোগ অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিন। মনোযোগ অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার ফলে একটা সময় আপনার দুশ্চিন্তার কারণ তার গুরুত্ব হারিয়ে ফেলবে।
  • যেকোন মানসিক অস্থিরতা (emotional instability) থেকে নিজেকে দূরে রাখতে মেডিটেশন (meditation) এর তুলনা হয়না। যখনই আপনি নিজেকে দুশ্চিন্তার কবলে পড়তে দেখবেন আপনি নিজেকে মেডিটেশনের জন্য প্রস্তুত করতে থাকুন। প্রায় নিশ্চয়তা দিয়ে বলা যাই যে মেডিটেশন আপনাকে সকল চিন্তা বা দুশ্চিন্তা থেকে রক্ষা করবে।
  • শারীরিক কসরত (physical exercise) করার মাধ্যমেও দুশ্চিন্তা থেকে নিজেকে দূরে রাখা যায়। আপনার মন দুশ্চিন্তা গ্রস্থ হয়ে উঠলে সামান্য কিছু ব্যায়াম করুন। দেখবেন দুশ্চিন্তা হতাশা গ্লানি সবটা কেমন কমে আসছে।
  • পরিবারের মানুষগুলোর সাথে কিছু ভালো মুহূর্ত কাটাতে পারেন। আপনার সঙ্গীকে নিয়ে কিছু একান্ত সময় উপভোগ করতে পারেন অথবা পরিবারের ছোট সদস্যদের সাথে মেতে উঠতে পারেন হাঁসি আনন্দে। উদ্বেগ আর দুশ্চিন্তা কমাতে এগুলোর বিকল্প হয়না।
  • দুশ্চিন্তা কমাতে আপনার দুচোখ বন্ধ করে বুক ভরে শ্বাস নিন আর শ্বাস ছাড়ুন। এতে করে আপনার শরীরে রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ বেড়ে যাবে আর আপনার স্নায়ু শান্ত হয়ে আসবে এবং মস্তিষ্কে অক্সিজেনের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় আপনার মাংসপেশি শিথিল হয়ে আপনার দুশ্চিন্তাগ্রস্থতা কমে যাবে।
আমরা প্রতিনিয়ত দৈনন্দিন কাজে এবং পারিপাশ্বিক ঘটনায় মানসিকভাবে ও শারিরীকভাবে ক্লান্ত হই। প্রতিদিনের এই ক্লান্তি ধীরে ধীরে হ্রাস করে আমাদের জীবনীশক্তি।
এই ক্লান্তি দূর করে প্রাণবন্ত ও হাস্যোজ্জ্বল থাকতে relaxation বা শরীর শিথীলকরণ খুবই প্রয়োজনীয় একটি প্রক্রিয়া। আমরা ধারাবাহিকভাবে বেশ কয়েকটি শরীর শিথীলকরণ পদ্ধতি সম্পর্কে জানব।
পদ্ধতি ১ (নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম)
  • প্রথমে একটি নিরিবিলি বসার স্থান খুঁজে নিন। স্থানটি আরামদায়ক ও স্বস্তিকর হতে হবে। খুব স্বস্তি নিয়ে যেন বসতে পারেন সেটি খেয়াল রাখুন।
  • হেলান দিয়ে পা-হাত ছেড়ে বসুন। যেন রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকে।
  • ধীরে ধীরে চোখের পাতা বন্ধ করুন।
  • এবারে গভীর এবং খুব লম্বা করে শ্বাস নিন, ধরে রাখুন। কয়েক সেকেন্ড ধরে রেখে নিঃশ্বাসটি ধীরে ধীরে ছেড়ে দিন। এভাবে দুই থেকে তিনবার করুন।
  • এখন আপনার স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস নিন। যেভাবে সবসময় নেন।
  • গভীরভাবে নিজ শ্বাস-প্রশ্বাস পর্যবেক্ষণ  করুন। কিভাবে নিশ্বাস-প্রশ্বাস নিচ্ছেন, কেমন করে আপনার মুখ, গলা, চিবুক, কাধঁ, বুক উঠানামা করছে- লক্ষ্য করুন।
  • মনোযোগ দিয়ে দেখুন কি ভঙ্গিতে বসে আছেন। কোথায় বসে আছেন।
  • এভাবে কয়েকবার মাথা থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত পুরো শরীর স্ক্যান (পর্যবেক্ষণ) করুন।
  • যখন পুরো প্রক্রিয়া শেষ হবে তখন ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকান।
*  ব্যায়ামটি বসে করার চেষ্টা করুন যেন শুয়ে না পড়তে হয়। পুরো কাজটি করার সময় ঘুমিয়ে যাবেন না।
* পুরো পদ্ধতিটি ৫ থেকে  ১০ মিনিট সময়ের মধ্যে করুন।


পদ্ধতি-২ ( মনের বাগান)
  • শুরুতে একটি আরামদায়ক ও নিরিবিলি স্থানে হেলান দিয়ে বসুন। ধীরে ধীরে চোখ বন্ধ করুন।
  • এবারে গভীরভাবে লম্বাকরে এক থেকে দু’বার নিঃশ্বাস গ্রহণ করুন এবং ধীরে ধীরে ছেড়ে দিন।
  • এখন স্বাভাবিক নিঃশ্বাস গ্রহণ করুন এবং পুরো মনোযোগ নিজের দিকে দিন।
  • কল্পনা করুন একটি খোলা জায়গাতে আপনি দাঁড়িয়ে আছেন। সামনে বিশাল বড় খোলা জায়গা। যতটুকু জায়গা ইচ্ছা হয় আপনি ঘুরে দেখুন এবং আপনার মনের বাগান করার জন্য ‍জায়গা নির্বাচন করুন। যতটুকু বড় বা ছোট আকার আপনি দিতে চান ঠিক ততটুকু নিন।
  • এবারে বাগানের মাটিতে ঘাস বা ফুলের গাছ লাগান। আপনার পছন্দের সবকটি ফুল বা ফল বা যে গাছটি আপনি চান নিয়ে আসুন এবং লাগিয়ে দিন। গাছগুলো বড় বা ছোট হতে পারে। বাগানের কোন দিকে কিভাবে গাছ লাগাবেন সেটি সম্পূর্ণ আপনার পছন্দ ও রুচি অনুযায়ী করুন।
  • বাগানের চারিদিকে কি থাকবে সেটি তৈরি করুন। আপনি কি কোন বেড়া বা দেয়াল দিয়ে সংরক্ষিত রাখতে চান কিংবা ইচ্ছা হলে চারপাশটা উন্মুক্ত রাখতে পারেন।
  • আপনার মনের এই বাগানটি কিসের পাশে আছে সেটি নির্ধারণ করুন। যেমন এটি কোন নদীর ধারে বা ঘন জঙ্গলে বা পাহাড়ে বা রাস্তার ধারে যে জায়গায় থাকলে আপনার ভাল লাগবে সেখানে কল্পনা করুন।
  • আপনি বাগানের মধ্যে আর কি কি ল্যান্ডস্কেপিং করতে চান দেখুন। সাজানোর জিনিস বা চাইলেই নতুন কোন আঙ্গিকে এটি তৈরি করতে পারেন।
  • বাগানের মাঝে একটি পানির ফোয়াড়া বা পুকুর বা যেকোন water body বসিয়ে দিন। পানিতে ইচ্ছা হলে মাছ বা ঝিনুক বা যেমনটা চান তেমনটি রাখতে পারেন।
  • এবারে বাগানের ভেতরে কিছু প্রাণী যেমন – পাখি, খরগোশ, হরিণ বা যে কোন প্রাণী নিয়ে আসুন যেটা আপনি পছন্দ করেন। তাদের নিরাপদ ও নির্বিঘ্নে ঘুরে বেড়ানো অবলোকন করুন।
  • এখন বাগানে বসার জন্য একটি জায়গা তৈরি করুন। যেখানে আপনি অনেক প্রশান্তি নিয়ে আরামের সথে বসতে পারবেন।
  • বাগানের ভেতরের কাজ শেষ হয়ে গেলে একটু চারদিক ঘুরে দেখুন আর কোন পরিবর্তন বা সংযোজন করতে চান কিনা। চাইলে সেটি করুন।
  • বাগানের পুরোটা ঘুরে বেড়ান এবং এর মুক্ত ও বিশুদ্ধ বায়ু বুক ভরে গ্রহণ করুন। বাতাসের শব্দ পাখির কিচির মিচির কান পেতে শুনুন।
  • এবারে বাগানে আপনার পছন্দের সেই মানুষগুলোকে আনুন যাদের আপনি খুব পছন্দ করেন। হতে পারে সেটি একজন বা দুইজন বা অনেকজন। তাদেরকে বাগানের প্রতিটা জায়গা ঘুরিয়ে দেখান। আপনার মনের বাগানটিকে আপনি যে এত চমৎকার ভাবে তৈরি করেছেন তা তাদেরকে দেখান।
  • দেখুন তারা আপনার বাগানের সৌন্দর্য্য ও সাজানোর প্রশংসা করছে। খুব খুশী হয়ে দেখছে এই চমৎকার আয়োজন। তাদেরকে ধন্যবাদ দিন।
  • ধীরে ধীরে তাদেরকে বাগান ঘুরানোর শেষে একে একে বিদায় দিন।
  • এখন আপনি আরো একবার পুরো বাগানটা ঘুরে আসুন। সবগুলো উপাদান যা যা দিয়ে , যে রং বা যে প্রাণী বা উপকরণ দিয়ে বাগানটি সাজিয়েছেন এক পলক ঘুরে দেখুন। দেখা শেষ হলে ধীরে ধীরে প্রক্রিয়াটি থেকে বের হয়ে আসুন এবং চোখ মেলে তাকান।
*এটি শুধুমাত্র শরীর শিথিলকরণ ব্যায়াম নয়, এটি আপনার একটি নিরাপদ ও পছন্দের জায়গা। যখন ইচ্ছ হবে আপনি চাইলেই সেখানে যেতে পারেন। এর সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে পারেন। এত সুন্দর ও মনোমুগ্ধকর মনের বাগান তৈরির জন্য আপনাকে অনেক অভিনন্দন।

পদ্ধতি ৩ ( সোনালী আলো)

  • প্রতিটা পদ্ধতির শুরুতেই আরামদায়ক, স্বস্তিকর ও নিরিবিলি জায়গা বেছে নিতে হবে।
  • হেলান দিয়ে আরাম করে বসুন এবং ধীরে ধীরে চোখ বন্ধ করুন।
  • স্বাভাবিক ভাবে নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ করুন ও শান্তভাবে ছেড়ে দিন।
  • এখন পুরো মনোযোগ আপনি নিজের দিকে দিন।
  • আস্তে আস্তে কল্পনা করুন আপনার কপালের ঠিক দুই ভ্রুর মাঝখানে একটি ছোট সোনালী আলোর বিন্দু তৈরি হয়েছে। সেখান থেকে আস্তে আস্তে সোনালী আলো বের হচ্ছে।
  • খেয়াল করুন সেই আলো বের হয়ে আপনার আশেপাশে ছড়িয়ে পড়ছে। আলোটি আপনাকে পুরোপুরি ঘিরে রেখেছে। যা পুরো ঘরকে একটা সোনালী আভায় পূর্ণ করে রেখেছে।
  • এবারে নিজেকে ঐ সোনালী আলোর মাঝখানে রেখে অনুভব করুন একরকম প্রশান্তি, সম্মান, উষ্ণতা, ভালোবাসা দিয়ে এটি আপনাকে ঘিরে রেখেছে। আপনার মনের মধ্যে এক অদ্ভুত ভালো লাগায় ভরে যাচ্ছে।
    ঐ সোনালী আলোটি আপনার নিজের তৈরি করা। যা আপনার কপাল থেকে বের হচ্ছে।
  • কল্পনা করুন আপনি উঠে দাঁড়িয়ে আপনার ঘরের জানালা দিয়ে বাহিরে তাকাচ্ছেন। আপনার সাথে সাথে সেই সোনালী আলো জানালা দিয়ে বাহিরে ঠিকরে পরছে। আপনি অবাক বিস্ময়ে সে দৃশ্য দেখছেন। বাহিরে সে সবগুলো প্রিয় মুখ দেখতে পাচ্ছেন যাদেরকে আপনি দেখতে চান। সেই সব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে পাচ্ছেন যা আপনি পছন্দ করেন। এখানে খানিকটা সময় থাকুন।
  • এবারে আবারো আপনার বসার স্থানে ফিরে যান। কল্পনায় দেখুন পুরো ঘরময় সেই সোনালী আলো যা আপনার কপাল থেকে বের হচ্ছে তা ছড়িয়ে আপনাকে অনেক ভালোবাসা, উষ্ণতা ও সম্মানে জড়িয়ে আছে।
  • ধীরে ধীরে সেই আলোর সবটুকু অনুভূতি নিয়ে এই পদ্ধতি থেকে বের হয়ে আসুন। চোখ মেলে তাকান।
নিজেকে আবিষ্কার করুন এক অসম্ভব ভালোলাগার অনুভূতি নিয়ে। আপনার মন ও শরীর দুটোই পরিপূর্ণ হল ভালোবাসা আর সম্পূর্ণ আপনার নিজস্ব প্রাণশক্তি দিয়ে। আপনার জন্য শুভকামনা।

পদ্ধতি -৪ ( মেঘলা আকাশ)

  • আগের মতই নিরিবিলি, আরামদায়ক একটি জায়গায় হেলান দিয়ে বসুন।
  • ধীরে ধীরে চোখ বন্ধ করুন এবং নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের স্বাভাবিক উঠানামা লক্ষ্য করুন।
  • চোখ বন্ধ অবস্থায় কল্পনায় আকাশ দেখুন। আকাশের গাঢ় নীল রং দেখুন। রংটির আভা কিভাবে সারা পৃথিবীকে আবৃত করে রেখেছে দেখুন।
  • কিছুক্ষণ পর দেখুন যে অনেক সাদা সাদা মেঘ আকাশের এক দিক থেকে অন্যদিকে ভেসে যাচ্ছে। মেঘের জায়গা বদল মনোযোগ সহকারে পর্যবেক্ষণ করুন।
  • খেয়াল করুন যে মেঘ গুলো এক পাশ থেকে আরেকপাশে যাচ্ছে তা কি এক রকম নাকি ভিন্ন। কোনটা বড়, কোনটা ছোট। কোন মেঘ পাতলা, কোনটা ঘন। কোনটাই স্থায়ী হচ্ছে না।
  • মেঘগুলো দেখুন আর মনে মনে ভাবুন আপনার জীবনে এমন অনেক খারাপ লাগা আছে । কোনটা গভীর কষ্টের কোনটা কম কষ্টের। এই মেঘগুলোর মতই ঐ কষ্টগুলো স্থায়ী নয়।
  • মেঘগুলো যেমন আকাশের বৈশিষ্ট্য বদলাতে পারেনা। নীল আকাশী রং আকাশের নিজস্ব। তেমনি আমাদের কষ্টগুলো আমাদের বৈশিষ্ট্য পরিবর্তিত করতে পারেনা। এভাবেই মেঘের ভেসে যাওয়ার মত কষ্টগুলো ভেসে চলে যায়।
  • ভাবুন আপনার স্বকীয় বৈশিষ্ট্য, সজীবতা, প্রাণবন্ততা, মানসিক শক্তি আকাশের মতই নিজস্ব থাকবে। এবং এজন্য আপনি নিজেকে আর আপনার সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ দিন।
  • এখন ধীরে ধীরে আপনার নিঃশ্বাস প্রশ্বাস লক্ষ্য করুন এবং এই প্রক্রিয়া থেকে বের হয়ে আসুন। চোখ মেলে তাকান।
আপনি আপনার বৈশিষ্ট্য, গুণাবলি ও প্রাণবন্ত অনুভূতি নিয়ে এবার ফিরে যান প্রতিদিনের কাজকর্মে এবং অনেক অনেক হাস্যোজ্জ্বল ও উদ্দীপনায় ভরপুর থাকুন।

পদ্ধতি-৫ ( অনুভবে ইন্দ্রিয়)

  • একই ভাবে আরামদায়ক স্থানে বসতে হবে। যেখানে বসবেন তা যেন নিরিবিলি ও স্বস্তিকর হয়।
  • ধীরে ধীরে শ্বাস গ্রহণ করুন এবং ছাড়ুন। দুই থেকে চারবার লম্বা করে কিন্তু ধীরগতিতে নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস নিন।
  • ধীরে ধীরে আপনার চোখ বন্ধ করুন। যারা চোখ বন্ধ করতে অসুবিধা হবে তারা চোখ খোলা রেখে একটি নির্দিষ্ট বিন্দুতে তাকিয়ে থাকতে পারেন। (তবে চোখ বন্ধ রাখলেই এই পদ্ধতি বেশী কার্যকর হয়)।
  • আপনি যেহেতু চোখ বন্ধ করে নিচ্ছেন দর্শন ইন্দ্রিয়কে আমরা পুরোপুরি বিশ্রাম দিয়ে আমাদের অন্যান্য ইন্দ্রিয়গুলোকে এবার একে একে মনোযোগ দিব। প্রথমে সমস্ত শরীরে কোথাও খুব শক্ত হয়ে আছে কিনা দেখুন। শরীরের কোন অংশ টাইট বা শক্ত হয়ে থাকলে সেটি শিথিল করে দিন।
  • যেখানে বসে আছেন সেই জায়গাটি স্পর্শ করুন। সেটি নরম নাকি শক্ত, কি উপাদানে তৈরি অনুভব করুন। যেখানে বসে আছেন সেখানে শীত নাকি গরম বা বায়ুর চাপ নাকি হালকা অনুভূতি হচ্ছে বুঝার চেষ্টা করুন।
  • স্পর্শ অনুভব বা ত্বক ইন্দ্রিয়ের অনুভূতি নেওয়ার পর আমরা শ্রবণ ইন্দ্রিয়ের অনুভূতি নিব। বুঝার চেষ্টা করুন আশে পাশে কি কি শব্দ আপনার কানে আসছে। পাখির ডাক, বাতাসের শব্দ, গাড়ির হর্ন, মানুষের কণ্ঠস্বর, হাঁটাচলার শব্দ বা যন্ত্রপাতির টুংটাং ইত্যাদি আলাদা করে শুনতে চেষ্টা করুন। শব্দগুলো কত দূর হতে আসছে সেটিও লক্ষ্য করুন।
  • এবার ঘ্রাণেন্দ্রিয় এর মাধ্যমে ঘ্রাণ নিন। নাকে কি কি ঘ্রাণ আসছে তা অনুভব করুন। এমন হতে পারে কোন ঘ্রাণ নাকে আসছে না এতে অবাক হওয়ার কিছু নাই। এমনটি হতেই পারে।
  • স্বাদ আর দর্শন ইন্দ্রিয় ছাড়া অন্য ইন্দ্রিয়ের অনুভব হয়ে গেলে সবগুলো ইন্দ্রিয়ের সমন্বয়ে এবার নিজেকে এবং নিজের অস্তিত্বকে অনুভব করুন।
  • পরিবেশের সাথে আপনার ইন্দ্রিয়ের সংযোগ লক্ষ্য করুন।
  • সবশেষে নিজেকে ধন্যবাদ দিন এত চমৎকার ভাবে শরীর শিথিলকরণের পর্বটি সম্পন্ন করার জন্য। এরপর প্রক্রিয়াটি থেকে বের হয়ে আসুন।
এই পদ্ধতিতে দর্শন এবং স্বাদ ইন্দ্রিয় কে ব্যবহার করা হয়নি কারণ স্বাভাবিকভাবে আমাদের এই দুটি ইন্দ্রিয় বেশী কাজ করে থাকে এবং আমরা অন্য ইন্দ্রিয়গুলোর অস্তিত্ব খুব একটা অনুভব করি না কিংবা করতে চাই না। তাই এই পদ্ধতিতে বহুল ব্যবহৃত ইন্দ্রিয় দুটি বিশ্রামে থাকবে। আসা করি এই পদ্ধতিটিও আপনাকে প্রাণবন্ত ও হাস্যোজ্জ্বল রাখবে কারণ ইন্দ্রিয়ের অফুরন্ত শক্তি আপনি সঞ্চয় করেছেন।


চা একটি অতি সুস্বাদু এবং সতেজকারী পানীয় । চায়ের রয়েছে বিভিন্ন ঔষধি গুন। বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের চা পাওয়া যায় বাজারে। মূলত ব্ল্যাক টি আর গ্রীন টি ই বাজারে অধিক প্রচলিত। ব্ল্যাক টি এর চাইতে গ্রীন টি শরীরের জন্য অধিক উপকারী। কারণ গ্রীন টি এর মধ্যে রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ। যেমন গ্রীন টি-তে রয়েছে ভিটামিন-এ, জিঙ্ক, ভিটামিন-ডি, ভিটামিন-বি, এন্টি অক্সিডেন্ট , ভিটামিন-ই, ভিটামিন-সি, বাইওটিন, ভিটামিন-কে, ইপিগ্যালকেটেচিন গ্যালাটে ইত্যাদি।
আজ গ্রীন টি এর এসব পুষ্টিগুণের ফলে আমাদের শরীরে কি কি উপকার সাধিত হয় সে সম্পর্কে জানব।
১। আথেরোসেক্লরোসিস এর ঝুঁকি কমায়ঃ
আথেরোসেক্লরোসিস এক ধরনের রোগ যা ধমনী বা শিরার ভেতরে প্লাক তৈরি করে রক্ত চলাচলে বাঁধা সৃষ্টি করে । ধমনীর মাধ্যমেই হৃদপিণ্ড এবং শরীরের অন্যান্য অংগ প্রত্যঙ্গে রক্ত প্রবাহিত হয়। সুতরাং ধমনীতে রক্ত চলাচলে বাঁধার সৃষ্টি হলে তা আমাদের শরীর এবং হৃদপিণ্ডের জন্য ক্ষতিকর।
এক্ষেত্রে গ্রীন টি এর ভেতরে বিদ্যমান ইপিগ্যালকেটেচিন গ্যালাটে নামক উপাদানটি ধমনী বা শিরাতে এই প্লাক প্রতিরোধ করে আথেরোসেক্লরোসিস নামক রোগ হওয়ার ঝুঁকি কমায়।
২। কোলেস্টোরেল এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করেঃ
গ্রীন টি শরীরের জন্য ক্ষতিকর কোলেস্টরেলের মাত্রা কমিয়ে আনে । গবেষণায় দেখা গেছে যে, দিনে ১০ কাপ গ্রীন টি পান করলে তা তাৎপর্যপূর্ণভাবে ক্ষতিকর কোলেস্টোরেলের মাত্রা কমিয়ে আনতে সহায়তা করে।
৩। ক্যান্সার প্রতিরোধ করেঃ
গ্রীন টি কিছু কিছু ক্যান্সার প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। যেমনঃ স্তন ক্যান্সার, যকৃতের ক্যান্সার, মূত্রথলির ক্যান্সার, প্রোস্টেট ক্যান্সার,ত্বকের ক্যান্সার এবং অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সার।
তবে এমন কোন গবেষণা করা হয়নি যে ঠিক কত পরিমাণে গ্রীন টি পান করলে ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব কিন্তু তারা গ্রীন টি- তে ইপিগ্যালকেটেচিন গ্যালাটে নামক উপাদান খুঁজে পেয়েছে যা খুব কার্যকরী ক্যামো প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। ক্যামো প্রতিরোধক উপাদানটি ক্যান্সার ধরা পড়ার আগেই ক্যান্সার সৃষ্টিকারী কোষগুলোর সাথে লড়াই করে এবং ক্যামো থেরাপির মতই এটি শরীরে ক্যান্সারের চিকিৎসা করতে থাকে।
৪। উদ্দীপক হিসেবে কাজ করেঃ
গ্রীন টি আমাদের মধ্যে উদ্দীপনা সৃষ্টি করতে সহায়তা করে কারন এর মধ্যে কিছু পরিমাণে ক্যাফেইন আছে। তবে এটা মনে রাখা জরুরী যে, গ্রীন টি-তে খুব অল্প পরিমাণে ক্যাফেইন আছে তাই কেউ যদি কফি পান করে অভ্যস্ত হয় তবে তার নিজের মধ্যে উদ্দীপনা সৃষ্টি করার জন্য বেশ কয়েক কাপ গ্রীন টি পান করতে হবে।
৬। গ্রীন টি কারডিওভাস্কুলার এর স্বাস্থ্য ভাল রাখতে সহায়তা করেঃ
গ্রীন টি বিভিন্নভাবে হৃদপিণ্ডকে ভাল রাখতে সহায়তা করে। এর মধ্যে একটি হল গ্রীন টি কোলেস্টরেলের মাত্রা কমিয়ে কারডিওভাস্কুলার প্রক্রিয়াকে ভাল রাখতে সহায়তা করে।
৭। ত্বক প্রানবন্ত এবং সুস্থ রাখতে সহায়তা করেঃ
গ্রীন টি এর মধ্যে বায়োটিন নামক এক ধরনের ভিটামিন খুঁজে পাওয়া গেছে যা ত্বক প্রাণবন্ত রাখতে সহায়তা করে এবং ত্বক সুস্থ রাখতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। তাছাড়াও গ্রীন টি এর মধ্যে যে এন্টি অক্সিডেন্ট আছে তা ত্বকে বয়সজনিত ছাপ প্রতিরোধ করে এবং সূর্যের অতি বেগুনী রশ্মি এর ফলে ত্বকের ক্ষতি হওয়া থেকে ত্বককে রক্ষা করে।
৮। দাঁতের ক্ষয়রোধ করে এবং মুখের দুর্গন্ধ প্রতিরোধ করেঃ
গ্রীন টি বিভিন্নভাবে আমাদের মুখের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে সহায়তা করে। যেমনঃ গ্রীন টি আমাদের লালার মধ্যের অম্লতার পরিমাণ কমিয়ে আনে এবং এর ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধক উপাদান আমাদের মুখের ভেতরের অংশকে পরিষ্কার এবং সুস্থ রাখতে সহায়তা করে যার ফলে মুখে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয় না।
৯। বিষণ্ণতা প্রতিরোধে সহায়তা করেঃ
গ্রীন টি এর মধ্যের এমিনো এসিড এল- হিনিং শরীরে এক ধরনের শান্ত এবং প্রশান্তি অনুভূতি উৎপাদন করতে সক্ষম। তাই এটি একটি প্রাকৃতিক বিষণ্ণতা প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে।
গ্রীন টি এর আরও অনেক উপকারীতা রয়েছে। তার কিছু মাত্র এখানে তুলে ধরা হয়েছে। কিন্তু গ্রীন টি উপকারী বলেই যে একসাথে অনেক পরিমাণে পান করলেই এসব উপকারীতা দ্রুত পাওয়া যাবে তেমন নয়। প্রতিনিয়ত পান করলে ধীরে ধীরে এসব সুফল পাওয়া সম্ভব। তবে অবশ্যই এটা মাথায় রাখতে হবে যে, মাত্রাতিরিক্ত যেকোন জিনিসই ক্ষতিকর। তাই গ্রীন টি শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী হলেও দিনে ১০ কাপের বেশী গ্রীন টি পান করা উচিত নয় কারণ দিনে ১০ কাপের চাইতে বেশী গ্রীন টি পান করলে তা যকৃতের ক্ষতির কারণ হয়।

Wednesday, February 22, 2017

গর্ভধারণ সব মেয়েদের কাছেই অতি কাঙ্ক্ষিত একটি বিষয়। একজন নারী প্রথম বারের জন্য যখন গর্ভধারণ করেন তার কাছে অনেক কিছুই থাকে অজানা। এই সামান্য অজানা তথ্যের জন্য অনেক সময় নানা ধরনের কুসংস্কার মায়ের উপর চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়। আর একজন নারী গর্ভধারণ করেছেন কি না তা বুঝা যায় কিছু লক্ষণ দেখে। অবশ্য প্রাথমিক পর্যায়ে একজন নারী গর্ভধারণ করলেও কোনো লক্ষণ নাও থাকতে পারে। গর্ভবতী হয়ে পড়লেও প্রথম কয়েক সপ্তাহ কিছু না-ও বুঝতে পারেন। একটু ক্লান্তি, একটু বমি বমি ভাব থাকতেও পারে আবার না-ও থাকতে পারে।
আপনি হয়তো সেসব খেয়ালই করলেন না। প্রথম যে বিষয়টি আপনি লক্ষ্য করবেন তা হলো, সময় মাসিক না হওয়া। এটা গর্ভধারণের একটা নিশ্চিত লক্ষণ, তবে আরও অনেক কারণে মাসিক না হতে পারে। তাই মাসিক বন্ধ হলেই আপনি গর্ভবতী হয়েছেন তা নিশ্চিত করে বলা যাবে না। কিন্তু গর্ভবতী হলে মাসিক বন্ধ হবেই। গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণগুলো হলোঃ

ঋতুস্রাব বন্ধ

যাদের নিয়মিত মাসিক হয় তাদের ক্ষেত্রে গর্ভধারনের সর্বপ্রথম চিহ্ন মাসিক বন্ধ হওয়া। মাঝে মধ্যে গর্ভবতী হলেও মাসিকের সময় সামান্য রক্তক্ষরণ হতে পারে। সবচেয়ে প্রচলিত ও তাৎপর্যপূর্ণ লক্ষণ হলো মাসিক বা ঋতুস্রাব বন্ধ হওয়া। তবে কোনো কোনো গর্ভবতী নারীর পিরিয়ড থাকতে পারে তবে তা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক হাল্কা মাত্রার ও কম সময়ের জন্য। কোনো নারীর যদি আগে থেকেই অনিয়মিত মাসিক হয়ে থাকে তবে গর্ভধারণের এ লক্ষণটি তার ক্ষেত্রে একটু সমস্যার সৃষ্টি করবে। ঠিক কবে থেকে মাসিক বন্ধ হলো তা সনাক্তকরণ একটু কঠিনই হবে।

অসুস্থ বোধ করা

কোনো কোনো গর্ভবতী নারী সাময়িক ভাবে একটু অসুস্থ বা বমি বমি বোধ করে। এই বমনেচ্ছা কারো কারো ক্ষেত্রে কম হয় বা কারো ক্ষেত্রে খুব অস্বস্তিকর হতে পারে। একে প্রাতঃকালীন অসুস্থতা বলে। তবে দিনের যে কোনো সময় এই বমনেচ্ছা প্রবল হতে পারে। এটাও হরমোনের তারতম্যজনিত কারণে হতে পারে। এছাড়াও অতিরিক্ত ক্লান্তিভাব এবং ঘুম ঘুম ভাব হতে পারে।

খাবারের প্রতি অনীহা

আগে ভাল লাগত এমন খাবার বিস্বাদ লাগে আর নতুন নতুন খাবার খেতে ইচ্ছে করে। আবার অনেকের মুখে তামাটে স্বাদ লাগে।

স্তনের পরিবর্তন

গর্ভধারণ নিশ্চিত হওয়ার পর স্তনের আকারে পরিবর্তন আসা শুরু হয়। প্রাথমিকভাবে স্তনের বোঁটায় পরিবর্তন আসে। বোঁটা চেপে ধরলে এক ধরনের রস নিঃসৃত হতে দেখা যায়। এটাও এক ধরনের সংকেত গর্ভধারণের। ক্রমেই স্তনের আকার বড় হতে পারে এবং ব্যাথা হতে পারে (অনেকের মাসিকের সময়ও এমন হতে পারে), সুঁড়সুঁড়িও অনুভূত হতে পারে। রক্তনালী (রগ) গুলি আরো বেশি করে দেখা যেতে পারে এবং স্তনের বোঁটা আরো শক্ত এবং কালচে মনে হতে পারে।

প্রস্রাব

আরেকটি লক্ষণ হলো অপেক্ষাকৃত বেশিবার প্রস্রাব করা। এমনকি রাতে প্রস্রাবের জন্য ঘুম ভেঙে যেতে পারে। এটা মূলত হরমোনের মাত্রার তারতম্য এবং মূত্রথলির ওপর অত্যধিক চাপজনিত কারণে হয়ে থাকে। এছাড়াও তলপেট ভরা ভরা লাগতে পারে।

যৌনিপথ

কোনো কোনো গর্ভবতী নারী প্রথমবার সন্তান নেয়ার সময় একটু ক্লান্ত বা অবসন্নবোধ করে এবং অনেকের ক্ষেত্রেই যৌনি ক্ষরিত রসের পরিমাণ অনেক বেড়ে যায়। এমনকি যৌনি পথে কোনো প্রকার জ্বালা পোড়া ছাড়াই বেশি বেশি ক্ষরণ হতে পারে।

কোষ্ঠকাঠিন্য

আরেকটি লক্ষণ হলো কোষ্ঠকাঠিন্য। এটি হরমোনের মাত্রার তারতম্যের কারণেই হয় এবং বর্ধনশীল জরায়ু ক্রমাগতভাবেই পেটে চাপ দিতে থাকে। বেশি বা প্রচুর আঁশ জাতীয় খাবার যেমন- শুকনো আলুবোখরা, শিম, ছোলা, মটরশুটি ইত্যাদি এক্ষেত্রে অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা রাখে।

গর্ভবতী হবার অন্যান্য লক্ষণসমূহযেগুলো ৮ সপ্তাহের গর্ভবতী মহিলারা রিপোর্ট করেছেন তা হল:

১.    উদরের স্ফিতি
২.    কোষ্ঠকাঠিন্য
৩.   বুক জ্বালাপোড়া
৪.    নাক বন্ধ থাকা
৫.    ছোট ছোট শ্বাস
৬.   খাবারে অত্যাধিক রুচি অথবা অরুচি
৭.    মানসিক পরিবর্তন
৮.   মাথা ফাকা ফাকা লাগা 
৯.    শিরা উপশিরা গুলো দৃশ্যমান হওয়া
১০.  হাতের তালু চুলকানো
১১.  ত্বকের রঙের পরিবর্তন ( বিশেষ করে মুখমন্ডলেরপেটেরঅথবা স্তনের নিপলের)১২. যৌন আকাঙ্ক্ষা কমে যাওয়া
গর্ভকালীন সময়ে উপরের এই  কারনগুলো নারীদের সবচেয়ে আলোচিত সমস্যা।

প্রেগন্যান্সি টেস্ট

প্রেগন্যান্সি টেস্ট

মাসিক বন্ধ হওয়ার দিন থেকেই প্রেগন্যান্সি টেস্ট করা যায়। টেস্ট পজিটিভ হলে আপনার গর্ভধারণের দুই সপ্তাহ অতিবাহিত হয়েছে বুঝতে হবে। দিনের যেকোনো সময়ে এই টেস্ট করতে পারেন। প্রথমে একটি পরিষ্কার কন্টেইনারে (সাবান দিয়ে ধুয়ে থাকলে দেখুন সাবান লেগে আছে কি না) প্রস্রাব সংগ্রহ করুন। কাছের ফার্মেসি থেকে কিনে আনা স্ট্রিপ দিয়ে এবার দেখে নিন আপনি গর্ভবতী কি না। এসব স্ট্রিপের সুবিধা হল, এগুলো বাসায় বসে গোপনীয়তা বজায় রেখেই করা যায়।
ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই মোড়কের নির্দেশিকা পড়ে নেবেন। মেয়াদোত্তীর্ণ হলে বা নির্দেশনা অনুসরণে ভুল হলে টেস্ট ভুল দেখাতে পারে। টেস্ট নেগেটিভ, কিন্তু আপনি নিজেকে সন্তানসম্ভবা বলে মনে করছেন, এমন হলে এক সপ্তাহ অপেক্ষা করে দেখুন। এরপরও মনে হলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন। টেস্ট স্ট্রিপ ছাড়াও কাছাকাছি থাকা হাসপাতাল, প্রসূতি ক্লিনিক বা  ডায়াগনস্টিক সেন্টারে আপনার প্রস্রাব পরীক্ষা করে গর্ভধারণ নিশ্চিত করতে পারেন।
চোখ একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। কিন্তু আপনি যদি চোখের ব্যাপারে অবহেলা করেন এবং উদাসীন থাকেন তাহলে তা আপনাকে নিয়ে যেতে পারে অন্ধত্বের দিকে। অনেকেই চোখের যে কোনো সমস্যাকে পাওয়ারের সমস্যা বলে ভুল করেন এবং ভাবেন চশমাই একমাত্র সমাধান যা অনেক বড় একটি ভুল। কম্পিউটারের সামনে কাজ করছেন তো করছেনই। চোখে সমস্যা হতেই পারে। চশমা পরতে ভালো লাগেনা? চোখের উপর দিয়ে খুব প্রেশার যাচ্ছে। তবে আপনার জন্য আছে বেশ কিছু ভালো টিপস। একেবারেই বিনামূল্যে। করে দেখুন বেশ কাজে আসবে। এসব টিপসগুলো কাজে লাগিয়ে দৃষ্টিশক্তির কিছুটা উন্নতি হবে।
কম্পিউটার, টেলিভিশন এবং মোবাইলের ব্যবহার কম করুন
প্রযুক্তি আমাদেরকে অনেক কিছুই দিয়েছে কিন্তু এই প্রযুক্তির কারণে আমরা অনেক কিছু হারাচ্ছিও। আমরা সকলেই জানি অতিরিক্ত কম্পিউটার, টেলিভিশন এবং মোবাইল ফোনের ব্যবহার আমাদের চোখের জন্য অনেক ক্ষতিকর। কিন্তু কেউ বাধ্য হয়ে এবং কেউ ইচ্ছে করেই এই জিনিসটি মানি না। ক্ষতিকর রেডিয়েশনের হাত থেকে চোখ বাঁচাতে যতোটা সম্ভব কম ব্যবহার করুন এইসকল জিনিস। আর আপনি যদি বাধ্য হয়ে থাকেন তবে একটানা কাজ করবেন না বা টিভি দেখবেন না।
চোখের স্বাস্থ্যের জন্য ঠাণ্ডা বাতাস
চোখের জন্য সঠিক পরিমাণে আলো বাতাসের প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি। যদিও আমাদের পরিবেশের দূষণের কারণে দূষিত বাতাসের কারণে আমরা অনেক সমস্যায় পড়ে থাকি। কিন্তু তারপরেও সকালের শুভ্র আলো এবং ঠাণ্ডা বাতাস চোখের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক ভালো। তাই সকালে উঠে ঠাণ্ডা বাতাস এবং আলোতে থাকার চেষ্টা করুন।
সঠিক খাবার খান
চোখের জন্য ভালো খাবার অবশ্যই প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখবেন। স্বাদের কথা একেবারেই ভুলে যান। চোখের সমস্যা থেকে মুক্তি দেবে এমন খাবার থেকে দূরে থাকবেন না। ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার, মাছ, শাকসবজি এবং ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার খান নিয়মিত। ভাজাপোড়া এবং তৈলাক্ত খাবার কম খাবেন।
চোখের ব্যায়াম করুন
দিনে কিছুটা সময় কাজের ফাঁকে বের করে নিয়ে ব্যায়াম করুন চোখের জন্য। চোখের পলক ঘন ঘন ফেলুন। কাজের ফাঁকে ২ মিনিট চোখ বন্ধ করে থাকুন। চোখ ঘুরিয়ে উপর নিচ ডানে বামে তাকান। দুই হাতের তালু ঘষে তালু গরম করে নিয়ে চোখ ঢাকুন হাতের তালুতে। চোখকে কাজের ফাঁকে বিশ্রাম দিন।
চেকআপ করান
সমস্যায় পড়ে ডাক্তারের কাছে না গিয়ে বছরে ২ বার সাধারণ চেকআপের জন্য ডাক্তারের কাছে যান। এতে করে যদি চোখে কোনো সমস্যা থেকে থাকে তাহলে তা প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়বে এবং আপনি বড় কোনো অসুস্থতা থেকে মুক্তি পাবেন।
চোখের সুস্থতায় মেনে চলুন কিছু নিয়ম। দেহের পাশাপাশি চোখ দুটোকেও রাখুন সুস্থ।
চোখের নিচে কালো দাগ এটা একটি সাধারণ সমস্যা। এই কালো দাগ হওয়ার পেছনে মূলত আমরা নিজেরাই দায়ী। ভাবছেন কিভাবে? নানা কারণে চোখের নিচে কালো দাগ পড়তে পারে। এর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলো-খাবারে অনিহা , অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা, রাত জেগে থাকা বা ঘুম কম হওয়া, কাজের বাড়তি চাপ নেওয়া, ধূমপান, ঋতুস্রাবে সমস্যা, বার্ধক্যজনিত কারণ, অনেক সময় সূর্যের অতি বেগুণী রশ্মির কারণেও চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে থাকে।
প্রতিদিন অন্তত ৮/১০ গ্লাস পানি পান করুন। নিয়মিত  কম করে হলেও  ৮ ঘণ্টা ঘুমান। বেশি বেশি সবুজ শাক-সবজি খান। খাবারের পাশাপাশি সালাদ খাবেন। এটা আপনার শরীরের স্থুলতা কমাতে সাহায্য করবে। প্রতিদিন চোখের ব্যয়াম করুন। চেষ্টা করুন দুশ্চিন্তা থেকে বিরত থাকার। দিনের যেকোন সময় বেছে নিন চোখের যত্নে ব্যয় করতে তবে ভালো হয় সময়টা ভোরে অথবা রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে হলে। বাহির থেকে ঘরে ফিরে চোখে পরিস্কার পানি দিয়ে ঝাপটা দিন। ধূমপান থেকে বিরত থাকুন। আর বাইরে বের হলে অবশ্যই চোখে সানগ্লাস ব্যবহার করুন।
এছাড়াও স্বাস্থোজ্জ্বল চেহারা এবং সুস্থ্যদেহ বজায় রাখতে যেসব বিষয়ে আপনাকে সচেতন থাকতে হবে তাহলো-
১) একটি আলু ঘষে তার থেকে রসটা নিয়ে পরিষ্কার তুলোয় লাগান।ঐ তুলো চোখের উপর রাখুন,খেয়াল রাখবেন চোখের পাতা এবং চোখের তলা যেন ভালোভাবে ঢাকা থাকে।১০ মিনিট রেখে ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
২) দিনে দুবার করে টম্যাটো আর লেবুর রস একসঙ্গে মিশিয়ে ডার্ক সার্কেলের উপর লাগান।খুব তাড়াতাড়ি ফল পাবেন।
৩) ৫টি আমন্ড বাদাম অল্প একটু দুধ দিয়ে বাটুন। তারপর affected area-তে ১৫ মিনিট লাগিয়ে রাখুন।এক সপ্তাহ রোজ লাগালেই ফল দেখতে পাবেন।
৪) আনারসের রস আর একটু হলুদ গুঁড়ো দিয়ে একটি পেস্ট বানান,১০ মিনিট লাগিয়ে রেখে ধুয়ে ফেলুন।
৫) রাতে শোয়ার আগে চোখের চারপাশে ভিটামিন ই এবং সি সমৃদ্ধ ক্রিম লাগান।
৬) পুদিনা পাতা বেটে লাগালেও খুব উপকার পাবেন,শুধু তাই নয় ক্লান্ত চোখের জন্যেও এটা খুব উপকারী।
৭) ডিমের সাদা অংশ নিয়ে চোখের চারপাশে লাগান,১৫ মিনিট লাগিয়ে রাখুন।এতে চোখের চারপাশের চামড়া টান টান হবে এবং ডার্ক সার্কেলও কমবে।
৮) শশার রস ডার্ক সার্কেলের জন্য খুবই উপকারী। শশার রস আর লেবুর রস একসঙ্গে মিশিয়ে লাগালে তাড়াতাড়ি কাজ হবে।
৯) দিনে দুবার করে গোলাপ জল লাগালে খুব উপকার পাবেন।২০ মিনিট রাখুন তারপর ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
১০) দু ফোঁটা আমন্ড অয়েল নিয়ে ঘুমোতে যাওয়ার আগে চোখের চারপাশে লাগান এবং আস্তে আস্তে ম্যাসাজ করুন। সারা রাত রেখে দিন, সকালে ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

Tuesday, February 21, 2017

গর্ভধারণ একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তবে এতে কোনো অস্বাভাবিকতা দেখা দিলে মা ও অনাগত সন্তানের জন্য সেটা মারাত্মক ঝুঁকির কারণ হয়ে উঠতে পারে।
তাই এ সময় কিছু সাবধানতা জরুরি:
* গর্ভাবস্থায় অন্তত চারবার চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হবে। গর্ভকালীন ১৬ সপ্তাহের মধ্যে মায়ের অন্তত একবার অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে, এর আগে যাওয়াও ভালো। পরে কখন যেতে হবে, চিকিৎসকের কাছে জেনে নিন।
* পর্যাপ্ত খাবার খেতে হবে। শাকসবজি, ফলমূল, দুধ, ডিম খাওয়ার পাশাপাশি সারা দিনে পর্যাপ্ত পানি পান করাটাও জরুরি।
* হবু মায়ের পর্যাপ্ত বিশ্রামও চাই। এ সময় রাতে আট ঘণ্টা ও দুপুরে দুই ঘণ্টা বিশ্রাম প্রয়োজন।
* ঢিলেঢালা ও আরামদায়ক পোশাক পরতে হবে।
* গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাস ও শেষ তিন মাস খুবই সাবধানে থাকতে হবে। এই সময় দূরে কোথাও ভ্রমণ করা ঠিক নয়। পেটে চাপ লাগতে পারে, এমন কোনো কাজই এ সময় করা যাবে না।
* গর্ভাবস্থায় মায়ের শরীরে আয়রন, ক্যালসিয়াম, ফলিক অ্যাসিড প্রভৃতি পুষ্টি উপাদানের চাহিদা বেড়ে যায়। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এসব উপাদানসমৃদ্ধ ওষুধ সেবন করতে হবে। সময়মতো টিটেনাসের টিকা নিতে হবে।
* পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে। শরীরের অন্যান্য অংশের পাশাপাশি স্তনের বোঁটাও পরিষ্কার রাখা প্রয়োজন।
* গর্ভাবস্থায় কোনো ধরনের সমস্যা হলে জরুরি ভিত্তিতে কোন চিকিৎসা কেন্দ্রে যাবেন, কীভাবে যাবেন, কোথায় প্রসব করাবেন—আগেই ভেবে রাখুন। নিজের রক্তের গ্রুপ জেনে রাখুন। জরুরি পরিস্থিতিতে প্রয়োজনে রক্ত দিতে পারবেন, এমন অন্তত কয়েকজনকে প্রস্তুত রাখা ভালো। জরুরি অবস্থায় চিকিৎসা করাতে এবং চিকিৎসাকেন্দ্রে যেতে-আসতে খরচ হতে পারে, এ বিষয়টির দিকে খেয়াল রেখে কিছু সঞ্চয় করতে হবে।
গর্ভকালীন জটিলতা ছাড়াও অন্যান্য সমস্যা, যেমন কাশি, জন্ডিস, ডায়াবেটিস প্রভৃতির চিকিৎসায় অবহেলা করা যাবে না।
* নিরাপদ প্রসব সম্পর্কে চিকিৎসকের কাছ থেকে জেনে নিন। মা হওয়ার মানসিক প্রস্তুতিও থাকা প্রয়োজন। সন্তান জন্মের পর মায়ের করণীয় সম্পর্কে জেনে রাখুন গর্ভাবস্থায়ই। প্রসবের পরেও মায়ের পর্যাপ্ত খাবার ও বিশ্রামের প্রয়োজন। জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই সন্তানকে মায়ের দুধ দিতে হবে। এ ছাড়া সন্তানের চোখের যত্ন, টিকা দেওয়ার নিয়ম এবং প্রসবের পর জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি সম্পর্কে জেনে নিন।
কিছু বিপদচিহ্ন: গর্ভকালীন বিপদচিহ্ন সম্পর্কে হবু মা এবং তাঁর বাড়ির লোকদের জেনে রাখা প্রয়োজন।
* প্রসবপূর্ব রক্তস্রাব ও পানি ভেঙে যাওয়া
* খিঁচুনি, চোখে ঝাপসা দেখা, তীব্র মাথাব্যথা
* পেটের ওপরের দিকে ব্যথা, ঘুমের অভাব, শেষ দিকে বমি বমি ভাব
* গর্ভস্থ শিশুর নড়াচড়া হ্রাস বা একেবারেই থেমে যাওয়া
* শুয়ে থাকা অবস্থাতেও পায়ে জমা পানি না কমা (গর্ভাবস্থায় স্বাভাবিকভাবে পায়ে পানি জমলে তা বিশ্রামে কমে যায়, বিশ্রামের পরেও না কমলে বুঝতে হবে এটি স্বাভাবিক নয়)
* রক্তচাপ ১৪০/৯০ মিমি পারদ কিংবা আরও বেশি থাকা
* মারাত্মক রক্তস্বল্পতা ও শারীরিক দুর্বলতা
* প্রসবের আগেই নাড়ি বের হয়ে আসা কিংবা সন্তানের মাথা বের হবার আগেই হাত কিংবা পা বেরিয়ে আসা
* প্রসবের ব্যথা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সময় পর্যন্ত স্থায়ী হওয়া
* প্রসবের পর গর্ভফুল না পড়া কিংবা অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হওয়া
এসবের যেকোনোটি দেখা দিলে দ্রুত নিকটস্থ স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রে যেতে হবে।
ডা. ফাহমিদা তুলি
স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগ
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
Powered by Blogger.

Contact us

Name

Email *

Message *

Followers

Featured Posts

Social Icons

Pages

Facebook

Video

সর্বাধিক পঠিত

Our Facebook Page

Text Widget