আপনি লক্ষ করলেন, আপনার শিশুটি বেশ কিছুদিন ধরেই কান চুলকানোর চেষ্টা করছে। এর আগে ওর মা কটনবাড দিয়ে কান পরিষ্কার করে দিয়েছেন; কিন্তু তাতেও উপশম হয়নি। শিশুর কানের ব্যাপারে আপনারা খুবই যত্নশীল, তাই নিয়মিত শিশুর কান পরিষ্কার করেন। কিন্তু তার পরও শিশুর কান চুলকানো সারছে না। ইদানীং শিশুর কান চুলকানোর প্রবণতা বেশ বেড়েছে, কানে ব্যথাও হচ্ছে সঙ্গে। দু-একদিন হলো কানব্যথাটা বেশ বেড়েছে, সঙ্গে কান দিয়ে পানির মতো কষ ঝরছে। অবস্থা ক্রমে খারাপের দিকেই যাচ্ছে।
একই রকম ঘটনা দেখা দিতে পারে বড়দের ক্ষেত্রেও। বিশেষ করে যাঁরা নিয়মিত কান পরিষ্কারের নামে পরম আয়েশে কানে কটনবাড দিয়ে কান থেকে যাবতীয় ময়লা বের করে আনার চেষ্টা চালাতে থাকেন।
এ দৃশ্যের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বিষয়টি হচ্ছে অটোমাইকোসিস কিংবা অটোমাইকোসিস উইথ ওটাইটিস এক্সটারনা। অটোমাইকোসিস কথার অর্থ হচ্ছে কানে ফাঙ্গাসের সংক্রমণ। আর অটোমাইকোসিস উইথ ওটাইটিস এক্সট্রারনার অর্থ হচ্ছে কানে ফাঙ্গাস সংক্রমণের সঙ্গে বহিঃকর্ণের ত্বকে প্রদাহ।
কানের বাড়তি যত্ন নিতে গিয়ে অনেক অভিভাবকই নিজে এবং শিশুর কান পরিষ্কার করে থাকেন। যদিও স্বাভাবিকভাবে কান পরিষ্কার করার কোনো দরকারই নেই। তার পরও অভিভাবকরা এই কাজ করে থাকেন। এতে কানে দেখা দেয় নানা ধরনের সংক্রমণ। এই সংক্রমণের অধিকাংশই হয়ে থাকে ছত্রাক বা ফাঙ্গাস সংক্রমণের কারণে। একই সঙ্গে দেখা যায় প্রদাহজনিত ইনফেকশন। আর এসব ইনফেকশন হয়ে থাকে প্রদাহজনিত বহিঃকর্ণের সরু নালিপথে।
এবার দেখা যাক, কীভাবে কানে এ ধরনের সংক্রমণের সূত্রপাত হয়
কানে কটনবাডসহ বিভিন্ন ধরনের উপকরণ ব্যবহারের কারণে বহিঃকর্ণের মধ্যে দেখা দেয় ফাঙ্গাসের সংক্রমণ। কানের এই ফাঙ্গাস দেখতে ভেজা পেপারের মতো। আরেক ধরনের ফাঙ্গাস দেখতে ছাই রঙের ময়লা কাদার মতো, ফাঙ্গাস সংক্রমণের শুরুতে বহিঃকর্ণের পথে চুলকাতে শুরু করে। কান চুলকানোর এই ঘটনা ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে। কানে ফাঙ্গাস সংক্রমণের প্রকোপ বাড়তে থাকার কারণে একপর্যায়ে বহিঃকর্ণের পথে ক্ষত সৃষ্টি হয় এবং পরিস্থিতি আরো নাজুক করে তোলে। এ পরিস্থিতিতে কানের ব্যথা তীব্র থেকে তীব্রতর হয়। আগেই বলা হয়েছে, কানে ফাঙ্গাস সংক্রমণের বিষয়টিকে অটোমাইকোসিস বলা হয়ে থাকে। অবস্থা জটিল হলে অটোমাইকোসিসের সঙ্গে বহিঃকর্ণের পথে ইনফেকশন থাকে। এ অবস্থায় কানে প্রচণ্ড ব্যথা হয়। কান দিয়ে কষের মতো ঝড়ে এবং কানে বন্ধভাব দেখা দেয়। কানের ফাঙ্গাস পরিষ্কার করে সেখানে অ্যান্টিফাঙ্গাল বা ফাঙ্গাস নিরাময়ের মলম ব্যবহার করতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিকও গ্রহণ করতে হয়।
অনেক সময় কান পরিষ্কার করতে যাওয়ার কারণে বহিঃকর্ণের ত্বক আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে ক্ষত সৃষ্টি হয়, দেখা দেয় ত্বকের ইনফেকশন। সে ক্ষেত্রেও প্রায় একই রকম উপসর্গ দেখা দেয়। আর চিকিৎসাও একই ধরনের।
কানে ফাঙ্গাস সংক্রমণ হলে সময়মতো চিকিৎসা নিতে হবে। তবে কানে যাতে ফাঙ্গাসের এই সংক্রমণ না ঘটে, সে জন্য সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে কানের এই ব্যথা ভয়াবহ হতে পারে। এই সতর্কতার অন্যতম দিক হচ্ছে অযথা কান পরিষ্কারের কাজ থেকে বিরত থাকা। অনেকেরই হয়তো জানা নেই যে অধিকাংশ ক্ষেত্রে কান পরিষ্কার করার কোনো প্রয়োজন নেই। কান পরিষ্কারের জন্য যত আয়োজনই আপনি করেন না কেন, তার কোনোটারই কোনো দরকার নেই।
মানুষের কান স্বাভাবিকভাবেই পরিষ্কার হয়ে যায়। আর এই পরিষ্কার থাকার ব্যবস্থা কানের মধ্যেই অটোমেটিকভাবে করা আছে। এ জন্য কোনো সাহায্যের দরকার নেই। তবে সব নিয়মেই যেমন ব্যতিক্রম থাকে, তেমনি এ ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম আছে। কারো কান খুব শুকনো থাকে। তাদের কানে ময়লা বেশি জমতে পারে। কিন্তু সেই ময়লা যখন কেউ নিজে থেকে পরিষ্কার করতে যান, তখন ধাক্কা খেয়ে সেটি আরো গভীরে চলে যায় এবং সেখানে আটকে থাকে। পরিণামে ব্যথা হয় এবং বহিঃকর্ণে ইনফেকশন হয়।
তাই ব্যতিক্রমী ক্ষেত্রে কান বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিলে তাদের কানও পরিষ্কার থাকবে। শুধু কান পরিষ্কার থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে অনেকেই, বিশেষ করে শিশুরা কানের ফাঙ্গাস সংক্রমণ থেকে রেহাই পেতে পারে। মনে রাখবেন, পরিষ্কার করা কোনো স্বাস্থ্য সচেতনতার ব্যাপার নয়। এটি আপনার কানে বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণের সূত্রপাত ঘটাতে পারে। আর কানে কোনো সমস্যা হয়েছে বলে মনে করলে তখন নাক কান গলা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়াই ভালো।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ।
0 comments:
Post a Comment