Wednesday, March 1, 2017

গর্ভাবস্থা প্রত্যেক প্রসূতির জন্য একদিকে যেমন খুশির কারণ, অন্যদিকে থাকে আশঙ্কা। আশার কথা, সাধারণভাবে শতকরা ৯০ থেকে ৯৫ ভাগ গর্ভাবস্থার পরিসমাপ্তি ঘটে সুষ্ঠুভাবে। তবে বাকি  ৫ থেকে ১০ ভাগ মায়ের ক্ষেত্রে দেখা দিতে পারে অস্বাভাবিকতা বা জটিলতা। এ জন্য চাই প্রসূতিসহ সংশ্লিষ্ট সবার সচেতনতা। কারণ, সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত এবং চিকিৎসা না হলে মা ও শিশু উভয়ের জন্য বিপদের কারণ হতে পারে।
গর্ভাবস্থা, প্রসব এবং পরবর্তী সময়ের বিপজ্জনক সমস্যাগুলো কখনো কখনো সতর্কসংকেত ছাড়াই হঠাৎ দেখা দিতে পারে। তবুও সব দম্পতিকে এবং আত্মীয়স্বজনকে ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভের লক্ষণ, বিপদের পূর্বাভাস ও মারাত্মক লক্ষণগুলো সম্পর্কে ধারণা থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, যেকোনো খারাপ অবস্থার জন্য আগে থেকে মানসিক ও অন্যান্য প্রস্তুতি না থাকলে সমূহ বিপদের সম্মুখীন হতে হয়। কোথায় নিকটবর্তী মাতৃসদন হাসপাতাল বা ক্লিনিক এবং সেখানে কীভাবে, কোন পথে যেতে হয় তা-ও জেনে রাখা ভালো। যানবাহন বা অ্যাম্বুলেন্স কোথায় কীভাবে পাওয়া যায়, তা-ও খোঁজখবর নিয়ে রাখা প্রয়োজন। সে জন্য কীভাবে কোথায় যোগাযোগ করতে হয়, তা জানতে হবে। প্রয়োজনীয় ফোন নম্বর, বিশেষ করে মোবাইল ফোন যদি থাকে অবশ্যই তার নম্বর জেনে নিতে হবে।
ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভ
যেসব ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় বা প্রসবের সময় মারাত্মক জটিলতা বা বিপদ ঘটার আশঙ্কা থাকে, সেসব অবস্থাকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে চিহ্নিত করা হয়। যেমন :
১. গর্ভবতী মায়ের বয়স যখন ২০ বছরের কম।
২. ৩৫ বছরের বেশি বয়সে গর্ভধারণ।
৩. দুই বছরের কম বিরতি দিয়ে গর্ভধারণ।
৪. আগে চার বা তার অধিকবার গর্ভধারণ।
৫. আগে কম ওজনের সন্তান জন্ম দেওয়ার ইতিহাস।
৬. আগে প্রসবের প্রত্যাশিত বা নির্ধারিত সময়ের আগে সন্তানের জন্ম হওয়া।
৭. আগে মায়ের গর্ভপাত, অপরিণত বা মৃত শিশু প্রসব হওয়া।
৮. পূর্ববর্তী প্রসব জটিলতা বা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে হওয়া।
৯. উচ্চতা তুলনামূলকভাবে কম হওয়া, অর্থাৎ চার ফুট ১০ ইঞ্চির কম হওয়া।
১০. প্রসবপথের কোনো সমস্যা থাকা।
গর্ভকালীন বিপদের পূর্বাভাস বা লক্ষণ
ক. গর্ভকালে ওজন প্রতি মাসে না বাড়া। প্রসবের আগে ওজন কমপক্ষে সাত কেজি বাড়া উচিত।
খ. চোখের পাতার ভেতরের দিক জিহ্বা, মুখমণ্ডল, হাতের তালু ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া, অর্থাৎ রক্তশূন্যতা হওয়া।
গ. হাত, পা বা মুখ ফুলে যাওয়া বা পানি আসা।
ঘ. গর্ভাবস্থায় যেকোনো সময় তলপেটে প্রচণ্ড ব্যথা হওয়া।
ঙ. জরায়ুতে শিশুর নড়াচড়া বন্ধ হয়ে যাওয়া।
চ. অবিরাম মাথাব্যথা।
ছ. গর্ভাবস্থায় তিন মাসের পরও বমি।
নিচের যেকোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে এবং প্রয়োজনে হাসপাতালে ভর্তি হতে প্রস্তুত থাকতে হবে।
১. গর্ভাবস্থায় যেকোনো সময় প্রসবপথে রক্তপাত হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা (উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ)।
৩. খিঁচুনি।
৪. অবিরাম বমি।
৫. প্রচণ্ড জ্বর।
গর্ভবতী ও তার কাছাকাছি অবস্থানকারী আত্মীয়স্বজনের সচেতনতা ও প্রাথমিক লক্ষণ সম্পর্কে সঠিক ধারণা অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত অবস্থা থেকে মা ও গর্ভস্থ সন্তানকে রক্ষা করতে পারে। তাই প্রয়োজন সংশ্লিষ্টদের স্বাস্থ্যশিক্ষার ব্যবস্থা করা। এ ব্যাপারে সব চিকিৎসক, বিশেষ করে যাঁরা গর্ভবতীর চেকআপ ও যত্নের সঙ্গে জড়িত, তাঁদের রয়েছে অপরিসীম দায়িত্ব। কারণ, তাঁদের সময় নিয়ে গর্ভবতী ও তাঁর আত্মীয়স্বজনকে এসব ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিতে হবে। এ ব্যাপারে সরকারি ও বেসরকারি সাহায্য সংস্থাগুলোকে আরো বেশি তৎপর হতে হবে।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, অর্থোপেডিকস ও ট্রমাটোলজি বিভাগ, ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।

0 comments:

Post a Comment

Powered by Blogger.

Contact us

Name

Email *

Message *

Followers

Featured Posts

Social Icons

Pages

Facebook

Video

সর্বাধিক পঠিত

Our Facebook Page

Text Widget